বাতিল হচ্ছে আইআরজিসির সন্ত্রাসী তকমা, টেনশনে ইসরায়েল

নিজেরাই এলিট বাহিনীটির লাগাম টেনে ধরবে এমন শর্তের ভিত্তিতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনের কালোতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে উদ্বেগ বেড়েছে ইসরায়েলসহ সমমনা দেশগুলোর। তারা এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসনকে এ পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। খবর আনাদোলু।

আইআরজিসি ও নাফতালি বেনেট

২০১৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইআরজিসিকে কালোতালিকাভুক্ত করেন। কোনো সার্বভৌম সরকারের কোনো অংশকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকাভুক্ত করার এমন ঘটনা ছিল ওয়াশিংটনের জন্য প্রথম। ট্রাম্প সেই সময় বলেছিলেন, আইআরজিসি হল ইরান সরকারের বৈশ্বিক সন্ত্রাসী অভিযান পরিচালনা ও বাস্তবায়নের প্রাথমিক মাধ্যম।

তবে এবার ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার চিন্তাভাবনা করছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। আইআরজিসির আঞ্চলিক ও অন্যান্য ভূমিকার ক্ষেত্রে ইরানের একধরনের প্রতিশ্রুতি অথবা পদক্ষেপের বিনিময়ে সন্ত্রাসী ট্যাগ তুলে নেওয়া যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

আইআরজিসির প্যারেড

জানা গেছে, ইরানের ক্ষমতাকাঠামোয় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এলিট সামরিক ও গোয়েন্দা বাহিনীর পাশাপাশি দেশটির বাণিজ্যিক খাতও নিয়ন্ত্রণ করে এই বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, এই বাহিনী বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে চলমান অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালোতালিকা থেকে আইআরজিসির নাম বাদ দেয়া। ওই চুক্তিতে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার বিনিময়ে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এককভাবে এই বৈশ্বিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর অবরোধ আরোপ করেন।

আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী কালোতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস শুধু বলেন, চুক্তি পুনর্জীবিত করার সংলাপে আলোচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে অবরোধ তুলে নেওয়া। তাই শর্ত সাপেক্ষে আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে বিস্তৃত পরোক্ষ আলোচনায় এটিই শেষ এবং সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ বিষয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলো। গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার ল্যাপিড একটি যৌথ বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা জানান, আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী কালোতালিকা থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টা তাদের হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি অপমানজনক বিষয়। সেই সাথে এটি দ্ব্যর্থহীন প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নথিভুক্ত বাস্তবতাকে উপেক্ষা করবে।

আমাদের জন্য বিশ্বাস করা কঠিন, এই সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে যে প্রতিশ্রুতি আদায় করা হবে, তারা তা পালন করবে। আমরা প্রত্যাশা করি, সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে এ ধরনের খালি প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ত্যাগ করবে না।