বিশেষ অভিযান: নিহত ১০০ মাদক ব্যবসায়ী, গুলিবিদ্ধ ৬ র‍্যাব সদস্য

বিগত কয়েক বছরে মাদকবিরোধী অভিযান ছিল র‌্যাবের অন্যতম একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশেষ এই অভিযানে 'গুলি বিনিময়ে' ১০০ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে ৬ জন র‌্যাব সদস্য। মঙ্গলবার র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে ‘‘র‌্যাব মেমোরিয়াল ডে’’ উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

প্রয়াত র‌্যাব সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বাহিনী প্রধান

অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের নিদর্শন স্বরূপ ২০২০ এবং ২০২১ সালে মোট ৬০ জন র‌্যাব সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী বিপিএম (সাহসিকতা) পদকে ভূষিত করেছেন বলে জানান র‌্যাব প্রধান।

তিনি বলেন, 'র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ‘‘র‌্যাব মেমোরিয়াল ডে’’ এর এই ক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল র‌্যাব সদস্যদের, যারা আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা ও দেশপ্রেমের সুমহান আদর্শে বলীয়ান হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। একই সঙ্গে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি র‌্যাবের সকল সাহসী সদস্যকে যারা দেশপ্রেম, একনিষ্ঠ আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের কাছে বিশেষ আস্থা ও ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন।'

করোনার সময়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বিগত বছরসমূহে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারিতে আমাদের দেশও আক্রান্ত হয়। এই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে র‌্যাব সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করে। এই যুদ্ধে র‌্যাবের ৭ জন সদস্য আত্মত্যাগ করেন। আমি সেসব র‌্যাব সদস্যের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। র‌্যাব করোনাকালীন দুর্যোগের সময় দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে।'

সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, 'এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মবিকাশের লগ্ন থেকেই র‌্যাব তার কার্যসম্পাদনায় সচেতন কর্মদক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গত এক বছরে র‌্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত ঘোষণাকরণ। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। ২০১৬ সাল হতে অদ্যাবধি র‌্যাবের সার্বিক ব্যবস্থাপনায়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনের ৩২৮ জন জলদস্যু পুনর্বাসিত হয়েছে। র‌্যাবের মাধ্যমে প্রদত্ত অনুদান প্রত্যেক জলদস্যুকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। এ বছর আমরা তাদের ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু প্রদান করেছি।'

জলদস্যু ও জঙ্গি দমন বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাব ফোর্সেস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই জন মানুষের অকুণ্ঠ আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গিবাদ দমন, চরমপন্থী দমন, জলদস্যু দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সবশেষ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। র‌্যাবের বিশেষ উদ্যোগে র‌্যাব ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম “নবদিগন্তের পথে” অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী এই উদ্যোগ। অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।

আত্মসমর্পণকৃত ৪২১ জন সন্ত্রাসীর (জলদস্যু ও জঙ্গি) পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। এভাবে অপরাধ দমনে বহুমুখী কর্মপন্থা নিয়ে র‌্যাব কাজ করছে। অপরাধ সমূলে উৎপাটনে র‌্যাবের এই বহুমুখী, অভিনব ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।"

র‍্যাব মহাপরিচালক বলেন, 'আমাদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতে যেমন অনেক সাফল্য, অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও। আমরা হারিয়েছি আমাদের অনেক প্রিয় র‌্যাব সদস্যদের। অপারেশন ও বিভিন্ন কারণে এ পর্যন্ত যেসব গর্বিত র‌্যাব সদস্য আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন, আজ তারা আর আমাদের মাঝে নেই- কিন্তু তাদের গৌরবোজ্জ্বল সাহসী কার্যক্রম আজও আমাদের অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে। আজকের এই দিনে আমরা সবাই তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাদের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি।'