ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির উপায় বাতলে দিলেন পুতিন

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। এর জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে দায়ী করছে পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, মস্কো কোনোভাবেই এর জন্য দায়ী নয় বরং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেওয়া পদক্ষেপের ফলে বিশ্বজুড়ে এমন সংকট তৈরি হয়েছে। এ সময় ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির ছয়টি উপায়ও বাতলে দিয়েছেন পুতিন।

ভ্লাদিমির পুতিন

গতকাল শুক্রবার রাশিয়া২৪ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে ক্রমবর্ধমান সমস্যার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা এবং এ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা আসলে নিজেদের দোষ অন্য কারো ওপর চাপানোর হীন চেষ্টা।

এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে দায়ী করে পুতিন বলেন- খাদ্যসংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও মূল্যস্ফীতির বিষয়টি সাম্প্রতিক বিষয় নয়। করোনা মোকাবেলায় মন্দা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে অর্থ ছাপায়। ফলে দুই বছরেরও কম সময়ে অর্থ সরবরাহ ৩৮.৬ শতাংশ বা ৫.৯ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়, যা খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইউক্রেনের গম রপ্তানি

আবার ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শী শক্তি নীতির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রস্তুতি না নিয়েই তারা সবুজ শক্তিতে রূপান্তরকে জোর করে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিল। এর মাধ্যমে তারা যেসব পদক্ষেপ নেয় সেগুলো বিশ্বব্যাপী জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে কমিয়ে দেয়। ফলে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া গ্যাস সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি থেকে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ সরে যাওয়ার ফলেও দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ রাশিয়ান ও বেলারুশিয়ান সার রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র একসময় সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ইইউ এখনও তা করেনি। এই সারকে কেন্দ্র করেও সব ধরনের খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে।

পশ্চিমা দেশগুলো নিজেরা এসবের জন্য দায়ী হলেও রাশিয়া বা পুতিনকে দায়ী করার চেষ্টা করছে। একই সাথে পুতিন বলেন, ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানিতে আমরা কেনো ধরনের বাধা দিচ্ছি না। তিনি বরং ইউক্রেন থেকে শস্য আমদানি করার সম্ভাব্য ছয়টি পথের কথা বাতলে দিয়েছেন।

প্রথমত, ওডেসাসহ ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা বন্দরগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ইউক্রেন যেসব মাইন স্থাপন করছে সেগুলো তুলে ফেলতে হবে।

দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা আজভ সাগরের বন্দর বার্দিয়ানস্ক, মারিওপোলের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানি করা যাবে।

তৃতীয়ত, ইউক্রেন থেকে দানিউব ও রোমানিয়ার মাধ্যমে শস্য রপ্তানি করা সম্ভব।

চতুর্থ, হাঙ্গেরির মাধ্যমে এটা সম্ভব।

পঞ্চমত, কিছুুটা সমস্যা থাকলেও পোল্যান্ডের মাধ্যমেও এটা সম্ভব।

ষষ্ঠত, সবচেয়ে সহজ ও সস্তা পথটি হলো বেলারুশের ভূখণ্ডের মাধ্যমে রপ্তানি করা। সবচেয়ে, কারণ সেখান থেকে সরাসরি বাল্টিক রাজ্যের বন্দরে, বাল্টিক সাগরসহ বিশ্বের যে কোনও জায়গায় রপ্তানি করা যায়।

পুতিন বলেন, প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো সমস্যাই নেই।

তিনি জাতিসংঘের তথ্য উদ্ধৃত করে বলেন, বিশ্বে বছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন টন শস্য ও গম উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে ইউক্রেনের রপ্তানি সম্ভাবনা মাত্র ২০ মিলিয়ন টন। এ বছর দেশটি মাত্র পাঁচ-ছয় মিলিয়ন টন রপ্তানি করতে সক্ষম, যা খুব সামান্য পরিমাণ। অথচ বলা হচ্ছে রাশিয়ার কারণেই ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী তাদের খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারছে না, যা পুরোপুরি মিথ্যাচার।