তেল, রেমিট্যান্স ও বাণিজ্য সঙ্কটের আতঙ্কে মোদি সরকার

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যাসেরই ধারাবাহিকতা চলছিল। তাই তো চরম ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করা থেকে দলীয় মুখপাত্রকেও বিরত রাখা যায়নি। কিন্তু এবার বিষয়টি এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, রীতিমতো তেল ও বাণিজ্য সঙ্কটের আতঙ্কে পড়েছে মোদি সরকার। ভারতের গণমাধ্যমগুলোতেই এমন খবর প্রকাশ করা হয়েছে।

আরব দেশগুলোতে কর্মরত এসব শ্রমিকের রেমিট্যান্সে শক্তিশালী ভারতের অর্থনীতি

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্রের হটকারী মন্তব্যের নিন্দা করেছে পুরো মুসলিম বিশ্ব। পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তান এবং ওআইসি। অনেকের নিন্দা গায়ে মাখতে না চাইলেও সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিন্দা প্রস্তাবে গায়ে ঘাম দিয়েছে মোদি সরকারের। সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা এখন চরম বিব্রত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

এর কারণও রয়েছে বিস্তর। সৌদি ও আরব আমিরাত, উভয় দেশই ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর তালিকায় ছিল। তেল থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘে পাশে থাকার প্রশ্নে নয়াদিল্লির সাথে এ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ জোরালো ছিল।

বিজেপি মুখপাত্রদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ভারতে বিক্ষোভ

জানা গেছে, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক লেনদেনকারী রাষ্ট্র সৌদি আরব। পাকিস্তান ও চীনের প্রবল চাপ সত্ত্বেও বিভিন্ন ইস্যুতে দেশটি ভারতের সঙ্গ দিয়েছে। কিন্তু এবার এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই বিজেপি মুখপাত্রদের অর্বাচীন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই দুই মুখপাত্রকে কেবল বহিষ্কারের মধ্য দিয়েই বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না।

সৌদি ও আরব আমিরাতের সাথে ভারতের বিশাল বাণিজ্য রয়েছে। এর সাথে রেমিট্যান্সের বিষয়টিও জড়িত। তাই সৌদিসহ উপসাগরীয় দেশগুলো কোনো কারণে বিগড়ে গেলে ভারতকে পড়তে হবে মহাবিপাকে। করোনা, ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের যতটা ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে এই রাষ্ট্রগুলো বেকে বসলে। অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কাও থাকছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে উপসাগরীয় সাতটি দেশের সাথে ভারতের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। শতকরা হরে ভারতের মোট আমদানি-রপ্তানির ১৯ শতাংশ। আবার প্রবাসী ভারতীয়দের থেকে রেমিট্যান্সের যে বিশাল স্রোত ভারতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে, তার ৫৪ শতাংশই আসে এই দেশগুলো থেকে। অন্যদিকে বিশ্বে যেভাবে তেলযুদ্ধ শুরু হয়েছে, সেখানে তেল বিক্রি অথবা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারির মতো বিষয় সামনে আসলে ভারতের অর্থনীতি ধসে পড়বে এটা নিশ্চিত।

সব মিলিয়ে আতঙ্কিত মোদি সরকার। তারা ভাবতেও পারেনি বিষয়টি এত জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এ কারণেই তারা পাকিস্তানকে নিজদেশের সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের দিকে তাকাতে বলেছে। ওআইসির সমালোচনাকে অযৌক্তিক ও সংকীর্ণমনা আখ্যা দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছে। বিপরীতে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত মুখ খুলতেই চুপসে গেছে ভারত।

দেশের ভেতরেও বিজেপির এই আত্মঘাতী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ভারতের কর্পোরেট ও বাণিজ্য মহল আকার-ইঙ্গিতে সরকারকে বার্তা দিয়েছে, এই প্রবণতা কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তো সরাসরিই বলেছেন, দেশে বিভাজন তৈরি করে ভারত বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি করে ফেলছে।

ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে প্রবল হিন্দুত্ববাদী বিজেপির চোখ ছিল আগামী নির্বাচনের দিকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে এ ধরনের অনেক কিছুই দেখে না দেখার ভান করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। এখন নির্বাচনের স্বার্থে উগ্রপন্থাকে চলতে দেবে, না দেশের স্বার্থে এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে বিজেপিকে।