চীনে কঠোর করোনা নীতি, দেশ ছাড়তে চায় মধ্যবিত্ত

চীনের কঠোর কোভিড নীতিতে অতিষ্ঠ দেশটির নাগরিকরা। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের জীবন চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। এমনকি অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান। কঠোর কোভিড নীতিতে ব্যাহত হয়েছে শিশুদের শিক্ষাকার্যক্রমও। এএফপি, ব্যাংকক পোস্ট।

চীনের কঠোর কোভিড নীতি অতিষ্ট করে তুলেছে নাগরিকদের

বর্তমানে কোভিড নীতিতে একটু শিথিলতা এলেও ততদিনে পায়ের তলা থেকে সরে গেছে মাটি। সংসারের হালটাকে শক্ত করে ধরে রাখার ক্ষমতাও হারিয়েছেন অনেকে।

সাংহাইয়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী অ্যালান লি (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, আমার নগদ সঞ্চয় জলে ডুবেছে। লকডাউনের মধ্যে ৪০০ কর্মীকে বেতন দিয়ে আমি এখন প্রায় পথের ভিখারি। শুধু তাই নয়, লকডাউন আমাদের শিশুদের সময়কে অপচয় করতে বাধ্য করেছে।

কঠোর কোভিড নিয়মগুলো তার ব্যবসাকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ব্যাহত হয়েছে ছেলের উচ্চশিক্ষাও। ব্যবসা আবার লকডাউনের আগের অবস্থানে ফিরে আসবে, এমন আশাও ছেড়ে দিয়েছেন অ্যালান। ফার্ম বন্ধ করে এখন হাঙ্গেরিতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

এরই মধ্যে একটি ইউরোপীয় বিনিয়োগ প্রকল্পের সুবিধা হাত করেছেন লি। পরিবার নিয়ে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বসবাসের অনুমতিও পেয়েছেন। লি বলেন, আমার মতো অনেকেই চান এখান থেকে সব সম্পদ বিক্রি করে অন্য কোনো দেশে চলে যেতে। কোনো মতে পেটেভাতে থাকতে পারলেও চলবে।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সি ছাত্রী লুসি। তিনি বলেন, আমি শুধু এমন একটি দেশে বাস করতে চাই যেখানে সরকার আমার ব্যক্তিগত জীবনে অশোভন হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ, এখানে ভাইরাস নীতিগুলো সরকারকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও নিরীক্ষণ করার অনুমতি দিয়েছে। এই দমবন্ধ অবস্থা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের অন্য কোথাও চলে যেতে হবে, নতুন করে জীবন শুরু করতে হবে।

অনেকে আবার পালানোর উপায় খুঁজছেন বিদেশিদের কাছেই। জার্মানিতে অভিবাসিত এক চীনা নারী এএফপিকে জানিয়েছেন, কয়েকডজন নাগরিক তার কাছে দেশ থেকে পালানোর টিপস চেয়েছেন। একই কথা বলেছেন বেইজিংভিত্তিক অভিবাসন পরামর্শদাতা গুও শিজে। তিনি জানান, মার্চ মাস থেকেই তার ক্লায়েন্টের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে।

লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ক্লায়েন্ট আসছে বানের জলের মতো। কেন দেশ ছাড়তে চাইছে চীনারা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে একবার মানুষের মনে অনীহা ঢুকে গেলে তা সহজে যায় না। অবস্থা বেগতিক দেখে বিদেশ-ভ্রমণের নীতি আরও কঠোর করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। কোভিডের দোহাই দিয়ে দেশের বাইরে সব ‘অপ্রয়োজনীয়’ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।