বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি ছড়াকার, কবি, শিশু সংগঠক ও যশস্বী সাংবাদিক দাদুভাই ৮৫ বছরে পা রেখেছেন। গত বুধবার (০৮ জানুয়ারি) ছিল তার ৮৪তম জন্মদিন। খ্যামিতান এই লেখকের আসল নাম রফিকুল হক। যেটি চাপা পড়ে আছে বাংলাদেশের তিন প্রজন্মের প্রিয় ‘দাদুভাই’ নামের জাদুতে। জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘চাঁদের হাট’র প্রতিষ্ঠাতা হওয়ায় তার এ পরিচিতি।

dadu vai

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনায় উজ্জীবিত কলম সৈনিক দাদুভাই স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে সক্রিয় ও তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ছড়াটি লেখার কৃতিত্বের অধিকারীও তিনি।

দাদুভাই একাধারে একজন পরিচিত নাট্যকার ও সুখ্যাত গীতিকারও। টেলিভিশন ও বেতার মাধ্যমে তার লেখা বড়দের ও ছোটদের অসংখ্য নাটক ও শিশুতোষ গান দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে বিটিভির প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘নতুন বাড়ি’র রচয়িতা তিনি, সেটির প্রযোজক ছিলেন কৃতি নাটব্যক্তিত্ব মরহুম আতিকুল হক চৌধুরী।

মরমী সঙ্গীতশিল্পী আবদুল আলীমের কণ্ঠে তার লেখা গান ‘নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা, কোন দূরে যাও চইলা’ আজও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তার লেখা ঈদের গান ‘ঘুরে ফিরে বারে বারে/ঈদ আসে ঈদ চলে যায়’ প্রতি ঈদেই একটি রেডিও-টেলিভিশনে বাজানো হয়। 

রফিকুল হক দাদুভাই ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম ইয়াসিন উদ্দিন আহম্মদ এবং মাতা মরহুমা রহিমা খাতুন। পৈতৃক নিবাস রংপুর শহরের কামালকাচনায় হলেও তার আদিনিবাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার শহরে। প্রথম স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হামিদা হকের মৃত্যুর পর কবি ফাতেমা হকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

তার বড় ছেলে আমেরিকা প্রবাসী জয় হক ও পুত্রবধূ স্বপ্না হক চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত। দ্বিতীয় ছেলে জ্যোতি হক শিক্ষার্থী অবস্থায় অজ্ঞাত ঘাতকের হাতে প্রাণ হন। দাদুভাইয়ের ছোট মেয়ের নাম জয়িতা ও সর্বকনিষ্ঠ ছেলে জীবন।

দীর্ঘ প্রায় ৬ দশক সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত দাদুভাই অধুনালুপ্ত দৈনিক পূর্বদেশের ‘চাঁদের হাট’ পাতা ও উপমহাদেশে শিশু-কিশোরদের প্রথম সংবাদপত্র অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক কিশোর বাংলার সম্পাদক ছিলেন। এই সময়ের অনেক খ্যাতিমান লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিকর্মী তার হাতে গড়া। বর্তমানে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

দাদুভাই তার সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ফেলোশীপ লাভ করেন। এছাড়া শিশু একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবর্তী একাডেমি পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মামনা পেয়েছেন।

রফিকুল হকের ছড়াগ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘বর্গি এলো দেশে’, ‘পান্তা ভাতে ঘি’, ‘নেবুর পাতা করমচা’, ‘মজার পড়া একশ ছড়া’; নাটক ‘বই বই হই চই; গদ্যগ্রন্থ ‘প্রাচীন বাংলার রূপকথা’ এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছোটদের উপন্যাস ‘একাত্তরে বিচ্ছু বশির’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।