আপনি পড়ছেন

তার নাম আলী আজগর মানিক। বসয় ৪৮ বছর। বাড়ি চট্টগ্রামে। তিনি অক্ষরজ্ঞানহীন হয়েও একটি দুটি নয়, বরং ৩টি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, একটি দৈনিক পত্রিকারও সম্পাদক তিনি। তবে এসব মিডিয়ার সবগুলোই ভুয়া।

ali azgar manikআলী আজগর মানিক, ফাইল ছবি

আর এসব ভুয়া টিভি ও দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক বানানোর নামে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা করে সাংবাদিক কার্ড বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা। টাকা নিয়ে সাংবাদিক বানানো এই আলী আজগরের নামে নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। অনেক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন এই প্রতারক। গ্রেপ্তারের পর এমন ভয়ানক তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সূত্রে জানা যায়, আলী আজগর যে সকল মিডিয়া চালাতেন সেগুলো হলো- সিটিজি ক্রাইম টিভি, সিটিজি টিভি, বার্তা টিভি ও "দৈনিক আই বার্তা" নামের একটা ভুয়া পত্রিকা। চট্টগ্রামে উত্থান হওয়া এই প্রতারক নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১০টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি। আলী আজগর মানিক একের পর এক অপরাধ ঘটিয়ে চট্টগ্রামে টিকতে না পেরে গত ২ বছর ধরে পালিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

ali azgar manik 1র‌্যাবের হাতে আলী আজগর মানিক

পলাতক অবস্থায়ই সম্পূর্ণ ভুয়া ও অনুমোদনহীন ৩টি টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনুমোদনহীন নামসর্বস্ব একটি ভুয়া দৈনিক পত্রিকাসহ ৪টি মিডিয়ায় সাংবাদিক বানানোর নামে সারাদেশের অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। মূলত এটিই তার প্রধান আয়ের উৎস।

রাজধানীর সিদ্দেশ্বরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি আলী আজগর মানিককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪। 

তার অপরাধ কৌশল সম্পর্কে জানা যায়, আলী আজগর মানিক টিভি চ্যানেল ও ভুয়া দৈনিক পত্রিকা খুলে মিডিয়ার জন্য সাংবাদিক বানানোর কথা বলে প্রথমে বিজ্ঞাপন দেয়। এতে বিভিন্ন বেকার ও নিরীহ লোকজন তার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয় এবং তার সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। 

পরবর্তীতে আলী আজগর মানিক তাদের জানায় যে, সাংবাদিক হতে হলে প্রথমে তাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪/৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। সে কখনো সরাসরি কারো সাথে দেখা করতো না এবং তার অফিস ও বাসার ঠিকানা কাউকে দিতো না। তার কথা বিভিন্ন লোকজন সরল মনে বিশ্বাস করে সাংবাদিক হওয়ার আশায় তাকে ৪/৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতো।

টাকা পাওয়ার পর আসামি আলী আজগর মানিক ওই ব্যক্তিদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখতো না। এভাবে সে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণার করে অসংখ্যা বেকার ও নিরীহ লোকজনকে সাংবাদিক বানানোর কথা বলে তাদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করে আসছে। 

এছাড়াও আলী আজগর মানিক চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ লোকজন, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও সমাজের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নামে ভুয়া এবং বানোয়াট সংবাদ প্রচারের ভয়-ভীতি প্রদান করে তাদের নিকট হতে মোটা অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে তা হাতিয়ে নিতো।

গ্রেপ্তারের পর র‍্যাব জানায়, আসামি আলী আজগর মানিকের বিভিন্ন নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া সে একাধিক বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল। যে মেয়েকে তার পছন্দ হতো তাকেই সে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করে। তার কুপ্রস্তাবে কোনো মেয়ে রাজি না হলে সে তাদের নামে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা লিখে এবং বিভিন্ন সময় তাদের মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দিতো। 

এ বিষয়ে র‍্যাব-৪ এর অপারেশন অফিসার মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি আলী আজগর মানিক বিভিন্ন লোকজনের নিকট হতে প্রতারণামূলকভাবে আনুমানিক ৪/৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।