ফিলিস্তিনের পক্ষে, ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন রাজা চার্লস

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেছেন রাজা চার্লস তৃতীয়। আজ শনিবার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। এর আগেই অবশ্য তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন, যেখানে তিনি আজীবন দেশবাসীর সেবা করার কথা জানিয়েছেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে, ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। ইরাকে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ায় তিনি বুশকে ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ব্লেয়ারকে অদূরদর্শী বলে মনে করতেন। খবর আল জাজিরা।

চার্লস ও মাহমুদ আব্বাস, ফাইল ছবি

মূলত ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে সম্পৃক্তদের কোনো ধরনের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরেই চার্লস উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর শাসক পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি ইসরায়েলি দখলদারিত্বে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের প্রতিও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। আবার ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। কখনো কখনো নিজের সংস্থার জন্য নগদ অর্থ নিয়ে কেলেঙ্কারিও বাঁধিয়েছেন।

চার্লসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ইস্যুতে অনুসন্ধান চালিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদসংস্থা আল জাজিরা। তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের আরব বসন্ত বিদ্রোহের পর চার্লস মধ্যপ্রাচ্যের আটটি রাষ্ট্রের সাথে শীর্ষনেতাদের সাথে ৯৫টি বৈঠক করেছেন। আবার গত এক দশকে মধ্যপ্রার্চের রাজতন্ত্রের দেশগুলোর কাছে সাড়ে ১৪ বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে এক সময় এসে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের জানিয়েছিলেন, তিনি আর তার উপসাগরীয় দেশগুলোতে ব্রিটিশ কোম্পানির পক্ষে অস্ত্র বিক্রি করতে চান না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তার ভেতর অন্যরকম সহানুভূতি কাজ করতো। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অধিকৃত পশ্চিম তীরে তার প্রথম সরকারি সফরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ ও কষ্ট দেখে আফসোস করেছিলেন। বেথলেহেমে বক্তৃতার সময় চার্লস বলেছিলেন, এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় কামনা, ভবিষ্যত সমস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও সমতা নিয়ে আসবে। ফিলিস্তিনিদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি আয়ননে সক্ষম হবে। সেই সময়ে স্কাই নিউজ বলেছিল, ভাষণটি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে রাজপরিবারের একজন সদস্যের সমর্থনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী।

চার্লসের অফিসের সহযোগিতায় রবার্ট জবসনের লেখা বই থেকে জানা গেছে, চার্লস ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইরাক আক্রমণের পক্ষে ছিলেন না। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের যুদ্ধের সমর্থনের কারণে তিনি চরম হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রশাসনকে তিনি ‘ভয়ঙ্কর’ বলে মনে করতেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের দূরদর্শিতার যথেষ্ট অভাব ছিল বলে তিনি মনে করতেন।

তবে নিজের চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙের কারণে বেশ কয়েকবার তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছেন। এ বছরই একটি অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১-১৫ এর মধ্যে কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল-থানি ব্যক্তিগতভাবে তাকে তিন মিলিয়ন ইউরো নগদ দিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়মবহির্ভুত ছিল। তবে চার্লসের কার্যালয় জানিয়েছে, অর্থটি তার একটি দাতব্য সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা যথাযথ শাসন পরিচালনা করেছে এবং আশ্বাস দিয়েছে যে সমস্ত সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।

গত বছর লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি তদন্তে জানা যায়, চার্লসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাইকেল ফসেট সৌদি বিলিয়নেয়ার মাহফুজ মারেই মুবারক বিন মাহফুজকে রাজকীয় সম্মান এবং এমনকি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য কাজ সমন্বয় করেছিলেন। এ জন্য মাহফুজ চালর্সের প্রতিষ্ঠানে ১৫ লাখ পাউন্ড দান করেছিলেন, যা নিয়ে গত বছর বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।