২০০তম দিনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, থামার লক্ষণ নেই

মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান। ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরু হওয়ার পর এমনই মনে হয়েছিল। কিন্তু সে ধারণা সত্যি হয়নি। আজ ২০০তম দিনে গড়াল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এ লড়াই থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। খবর আল জাজিরা।

২০০তম দিনে পৌঁছল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

এ বছরের শুরু থেকেই ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের লোকজনের নিরাপত্তা বিধান এবং ন্যাটো ইস্যুকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক হামলার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। তারপরও দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনা নিহত হয়েছে, দেশ ছেড়ে পালিয়েছে কোটি মানুষ। দেশের অভ্যন্তরেও প্রচুর মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অবকাঠামোগত প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বেশকিছু শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ইউক্রেনের একটি শহর

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলতে থাকায় রাশিয়াকেও এ যুদ্ধের মূল্য দিতে হয়েছে। রণাঙ্গণে সেনা, অস্ত্র ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতি তো আছেই, যুদ্ধের জেরে ইউরোপ-আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইউক্রেনের জনবল বা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে প্রতিরোধ করা কঠিনই ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো ইউক্রেনকে প্রচুর পরিমাণে সামরিক ও মানবিক সহায়তা দিয়েছে। ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে অস্ত্র সংকটে পড়তে হয়নি ইউক্রে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে। ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া এক কোটির মতো শরণার্থীকেও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থান দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো।

তবে রাশিয়ার হামলায় অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা বেশ ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। বেশকিছু শহর একেবারে ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দুইশত দিনে পড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষেই যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়ে। দুই দেশ থেকেই খাদ্যশষ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এতে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ভেঙ্গেছে। রাশিয়ার সারের অভাবে আগামী দিনেও খাদ্য সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে তুরস্ক ও জাতিসংঘের প্রচেষ্টায় ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তির মধ্য দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ পুরোপুরি না থামা পর্যন্ত বিশ্বের অস্থিতিশীল এই পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে না।

যুদ্ধের সর্বশেষ খবরে দেখা যাচ্ছে, খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনের সেনারা রুশ সেনাদের হটিয়ে দিচ্ছে। গত তিন দিনে ইউক্রেনের সেনারা আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে, এমনটাই জানিয়েছেন জেলেনস্কি।