পাশ্চাত্যবিরোধী সহযোগিতা নিয়েই পুতিন-শি বৈঠক

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই বছরেরও বেশি সময় পর প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। চলতি সপ্তাহে রাশিয়া ও চীনের দুই নেতার বৈঠকে পাশ্চাত্যবিরোধী অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। জার্মান সংবাদমাধ্যম হান্ডেলসব্লাট আজ এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

ভ্লাদিমির পুতিন ও শি জিনপিং

আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার উজবেকিস্তানের সমরখন্দে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ হতে চলেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর রুশ ও চীনা নেতার এটাই প্রথম সাক্ষাৎ। হান্ডেলসব্লাটের মতে, কোভিড পরবর্তী প্রথম সফরে সৌদি আরব যাওয়ার কথা থাকলেও চীনা নেতা রাশিয়ার প্রতি তার দেশের সমর্থনের কথা সবাইকে জানান দিতে সফরসূচি পাল্টে উজবেকিস্তান যাচ্ছেন।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া মূল বক্তব্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রবৃদ্ধির’ নতুন কেন্দ্রের কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমা দুনিয়াকে হটিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসসিও সম্মেলন চলাকালে পুতিন চীনা রাষ্ট্রপ্রধান ও কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকে তিনি এ অঞ্চলের দেশগুলোর নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ পৃথিবীটা কেমন হতে পারে, সে সংক্রান্ত রূপরেখা রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের কাছে তুলে ধরবেন।

ক্রেমলিনের সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা জোরদারের পাশাপাশি রাশিয়া ও চীন কীভাবে বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধের মোকাবেলা করবে এবং পরষ্পরকে সমর্থন দেবে- সমরখন্দের বৈঠকে সে বিষয়ে বিষদ আলোচনা হবে।

বেইজিংয়ে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই ডেনিসভ বলেছেন, দুই প্রেসিডেন্টের বৈঠক আয়োজনের খুঁটিনাটি নিয়ে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এসসিও জোটের অন্য সদস্য ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানের নেতাদের মধ্যেও বেশ কয়েকটি বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সমরখন্দে পুতিন-শি জিনপিং বৈঠকের প্রতীকী গুরুত্ব অপরিসীম। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে শি জিনপিং দেশের বাইরে যাননি। করোনা-পরবর্তী প্রথম সফরে তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তিনি যে সেখানে না গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন, তার মাধ্যমে রাশিয়ার প্রতি চীনের অঙ্গীকারকেই তুলে ধরা হচ্ছে।

এর আগে ফেব্রুয়ারির শুরুতে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শি জিনপিং ও পুতিনের দেখা হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে ইউক্রেন আক্রমণের পর চীন দৃঢ়ভাবে রুশ অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধে চীন নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করলেও দেশটি বেশিরভাগ পয়েন্টে রাশিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করে। ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের ঘোর বিরোধী চীন। ইউক্রেনে উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে চীন। ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক উপস্থিতিকে ঘিরে রাশিয়ার ‘নিরাপত্তাজনিত আইনসঙ্গত উদ্বেগ’ সমর্থন করে চীন। রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে ‘বেআইনি’ অভিহিত করেছে চীন। দেশটি ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং এটাকে ‘আক্রমণ’ না বলে ‘যুদ্ধ’ বলছে।

ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে চীনের নিজস্ব উদ্বেগও কম নয়। তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় ন্যাটো’ গড়তে চায় বলে অভিযোগ করেছে বেইজিং। বাণিজ্যিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অবরোধসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অনুসৃত বেশিরভাগ কৌশল নিয়েই চীনের জোরালো আপত্তি রয়েছে।

তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে ঘিরে সৃষ্ট উত্তেজনায় চীনের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি তাইওয়ান ইস্যুতে উসকানিমূলক আচরণের অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। পেলোসির সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে রাশিয়া ও চীন আরও ঐক্যবদ্ধ হবে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নেতা। 

গতকাল শনিবার রাশিয়ায় শুভেচ্ছা সফরে গিয়ে চীনা পার্লামেন্ট পিপলস কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান লি ঝানশু বলেছেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ নিবারক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বেইজিং ও মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সামরিক জোট সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে চীন ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করবে।