আড়াই ঘণ্টায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সক্ষমতার অর্ধেক ধ্বংস

আড়াই ঘণ্টায় ইউক্রেনের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ ভাগ ধ্বংস করেছে রাশিয়া। কাস্পিয়ান সাগরে রুশ নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে ক্যালিবার মিসাইল হামলায় পূর্ব ইউক্রেনের প্রধান তিনটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংসের পাশাপাশি দক্ষিণ ইউক্রেনের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণকারী জাপরোঝিয়া পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রও বন্ধ করে দিয়েছে রুশ বাহিনী।

গুরুত্বপূর্ণ তিনটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে মিসাইল হামলার জেরে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে

রুশ হামলার জেরে ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও ব্ল্যাকআউটের শিকার হয়েছে দেশটির মধ্যাঞ্চল এবং রাজধানী কিয়েভের একাংশ। ফেব্রুয়ারিতে রুশ আক্রমণ শুরুর পর থেকে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ইউক্রেনীয় পক্ষের বয়ান দিয়ে আসা টেলিগ্রাম চ্যানেল ও অনলাইন পোর্টালগুলোর বেশিরভাগও বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোববার সকালে রুশ বাহিনী খারকিভ শহর ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানকার হাজার হাজার মানুষ গাড়ি চড়ে ও পায়ে হেঁটে রাশিয়া সীমান্তের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ইউক্রেনীয় বাহিনী খারকিভে প্রবেশের পর সেখানে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। রুশ বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতার দায়ে গ্রেপ্তার এড়াতে ও নতুন করে যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কায় দিনভর রাশিয়ায় আশ্রয় নেয় বিপূল সংখ্যক ইউক্রেনীয় নাগরিক।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, রোববার সন্ধ্যায় কাস্পিয়ান সাগরে রুশ নৌযান থেকে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯:৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ে নিক্ষিপ্ত ১২টি মিসাইলের মধ্যে নয়টিই ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। মিসাইল হামলায় খারকিভে অবস্থিত জমিভস্কায়া মিশ্র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (খারকিভ সিএইচপিপি-৫), দনিপ্রোভস্কে অবস্থিত পাভলোগ্রাদ সিএইচপিপি-৩ ও পোলটাভায় অবস্থিত ক্রেমেনচুং টিপিপি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

রুশ হামলার জেরে ইউক্রেনজুড়ে বিদ্যুৎ গ্রিডে ওভারলোডিংয়ের কারণে বিপূল সংখ্যক টিভি, ফ্রিজ, সেলফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়ে যায়। একই কারণে আগুন ধরে নষ্ট হয় পোলটাভা ও অন্যান্য শহরের চলাচলরত কয়েকশ ইলেকট্রিক ট্রলি বাস। বন্ধ হয়ে যায় খারকিভ মেট্রো সিস্টেম। অনেকগুলো শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল টেলিকম নেটওয়ার্ক কাজ করছে না অনেক শহরে।

ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ গ্রিড ব্যবস্থা পুনর্গঠনের পাশাপাশি পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় সোমবার নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়। এ অবস্থায় সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো রুশ নৌবাহিনী পূর্ব ও মধ্য ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সাবস্টেশন ও অন্যান্য বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালালে আবারও অন্ধকার হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ জনপদ। নতুন করে বিমান ও মিসাইল হামলা সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে ইউক্রেন সরকারের যে এয়ার ডিফেন্স ওয়ার্কিং সিস্টেম রয়েছে, সেটাও এখন পুরোপুরি কাজ করছে না।

জানা গেছে, ইউক্রেনের বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এর মধ্যে চারটি পারমাণবিক কেন্দ্র জাপরোঝিয়া, রিভনি, খেমেলনিউটস্কি ও ইয়ুঝনো-উক্রেনিয়া থেকে মেটানো হয় বিদ্যুৎ চাহিদার ৬০ শতাংশ। চার কেন্দ্রের মোট ১৫টি পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে ছয়টিই জাপরোঝিয়ায়, যা একাই ইউক্রেনের মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ জোগান দেয়।

রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর উপর্যুপরি গোলাবর্ষণের কারণে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জাপরোঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রুশ মিসাইল হামলায় খারকিভ, পোলটাভা ও পাভলোগ্রাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর হিট ক্যাপাসিটি সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ইউক্রেনের জাতীয় গ্রিড সিস্টেমে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়, সেটা সামাল দিতে ইয়ুঝনো-উক্রেনিয়া ও খেমেলনিউটস্কি- এ দুটি পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রকে গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এতে করে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।