যে ৫ কারণে চীনের অর্থনৈতিক সংকট

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়েছে। মূলত কঠোর জিরো-কোভিড নীতি এবং বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে চীনের অর্থনীতির এই হাল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান শিগগিরই পাওয়া যাবে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি যদি সংকুচিত হয়ে পড়ে তাহলে তা বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং

বিবিসি জানিয়েছে, বেইজিংয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জন এখন অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সংকোচন কোনো মতে এড়িয়ে গিয়েছিল চীন। তবে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ এ বছর আর চীনের প্রবৃদ্ধি আশা করছেন না।

কদিন আগে মার্কিন ডলারের বিপরীতে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পতন ঘটেছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের। দুর্বল মুদ্রা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করছে, যা আর্থিক বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তৃতীয়বার নেতা নির্বাচিত হওয়ার পথে আছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর পার্টির কংগ্রেস শুরু হবে। ঠিক এমন সময় চীনে এসব ঘটছে। যা শি জিনপিংয়ের জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বিবিসির প্রতিবেদনে চীনের অর্থনৈতিক সংকটের পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে।

সর্বনাশ করছে জিরো কোভিড নীতি

শেনজেন এবং তিয়ানজিনের মতো উৎপাদন কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি শহরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশটির শিল্পখাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করেছে। খাদ্য, পানীয়, খুচরো বা পর্যটন খাতে মানুষ অর্থ ব্যয় করছে কম। যা গুরুত্বপূর্ণ সেবাখাতকে চাপে ফেলেছে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, সেপ্টেম্বরে দেশটির কারখানায় কর্মকাণ্ড বাড়তে শুরু করেছে। তবে এই তৎপরতার নেপথ্য কারণ হলো, সরকার অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে। টানা দুই মাস উৎপাদন না বাড়ার পর এমনটি দেখা যাচ্ছে। তবে বেসরকারি প্রতিবেদনে সেপ্টেম্বরে উৎপাদন কমে যাওয়ার কথা বলার ফলে সরকারের এই দাবি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বেসরকারি জরিপ অনুসারে, চাহিদার কারণে কমছে উৎপাদন, নতুন অর্ডার ও কর্মসংস্থান।

বেইজিং যথেষ্ট কাজ করছে না

চীন সরকার আগস্টে স্থবির অর্থনৈতিক অবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নিতে শুরু করে। সে সময় ছোট বাণিজ্য, অবকাঠামো ও আবাসন খাতের স্থবিরতা দূর করতে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ানের একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আরও অনেক কিছু চাইলে করতে পারে।

আবাসন খাতে সংকট

আবাসন খাতে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়া এবং নেতিবাচক মনোভাবের কারণে প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। কারণ আবাসন ও অন্যান্য খাত থেকে দেশটির জিপিডির এক-তৃতীয়াংশ আসে।

নির্মাণকাজ শেষ না হওয়া ভবনগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন বাড়ির ক্রেতারা। অনেকেই আশঙ্কা করছেন আদৌ তাদের বাড়ির নির্মাণ কাজ হবে কিনা। নতুন বাড়ির চাহিদা কমেছে এবং এর ফলে নির্মাণ খাতে প্রয়োজনীয় আমদানির পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। আবাসন খাতকে চাঙ্গা করতে সরকারের উদ্যোগে পরও এই বছর দেশটির বিভিন্ন শহরে বাড়ির দাম কমেছে ২০ শতাংশের বেশি।

পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে জলবায়ু পরিবর্তন

চীনের শিল্পখাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে চরম আবহাওয়া। আগস্টে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিচুয়ান ও মধ্যাঞ্চলীয় চংকিং শহরে খরার পর ভয়াবহ তাপদাহ দেখা দিয়েছিল। এতে শীতাতপ যন্ত্রের চাহিদা বাড়ায় তা বিদ্যুৎ গ্রিডকে চাপে ফেলেছে। এই অঞ্চলটি বিদ্যুতের জন্য মোটামুটি জলবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। চীনের পরিসংখ্যান ব্যুরোর আগস্টের তথ্য অনুসারে, বছরের প্রথম সাত মাসে লোহা ও স্টিল খাতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মুনাফা কমেছে ৮০ শতাংশ।

টেক কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ হারাচ্ছে

দুই বছর ধরে চীনের বড় বড় টেক কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হচ্ছে না। সম্প্রতি টেনসেন্ট ও আলিবাবা প্রথমবারের মতো আয় কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। টেনসেন্টের মুনাফা কমেছে ৫০ শতাংশ এবং আলিবাবার মোট আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। লাখো তরুণ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে এক জন এখন বেকার। যা দীর্ঘমেয়াদে চীনের উৎপাদনের সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি কমাতে পারে।