রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় কমছে সৌদির তেল রপ্তানি

রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা মিত্রদের ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞায় এশিয়ায় সৌদি আরবের তেল রপ্তানির পরিমাণ কমছে। ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত ও চীনের মতো বড় ক্রেতারা কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। সৌদি আরবের জ্বালানি বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। খবর আরবনিউজ।

রাশিয়ার তেলবাহী কার্গো জাহাজ

কিং আবদুল্লাহ পেট্রোলিয়াম স্ট্যাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত এক বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপ-আমেরিকাতে তেল বিক্রি করতে না পেরে নতুন ক্রেতার সন্ধানে নামে রাশিয়া। এ সময় তারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাজারের স্বাভাবিক দামের তুলনায় অনেক হ্রাসকৃত মূল্যে তেল বিক্রয়ের অফার দেয়। এতে এগিয়ে আসে ভারত ও চীনের মতো বড় বড় ক্রেতা।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরবরাহ কম ও আর্থিক সংকটের কারণে যেখানে বিশ্বের প্রায় সব দেশ তেল কিনতে পারছিল না, তখন এশিয়ার এই দুই পরাশক্তি অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি তেল কেনে রাশিয়া থেকে। এতে স্বাভাবিকভাবেই দেশ দুটি অন্য সব উৎস থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দেয়। আর এর প্রভাব পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তেল রপ্তানির ওপর।

সৌদি আরবের তেল সরবরাহের পাইপলাইন

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত তেল সরবরাহে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণে ভারত ও চীনের বাজার কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে সৌদি আরব। তবে এর পরিমাণ খুব বেশি নয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, সৌদি জিডিপিতে এর পরিমাণ ০.১ শতাংশ থেকে ০.২ শতাংশ।

এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনে মস্কোর হামলার পর থেকে চীন ও ভারতে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের তুলনায় জুলাই-আগস্ট সময়ের মধ্যে চীনে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি ১৭ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ভারতে বেড়েছে ৫.৭ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী দুই বছরে তেলের দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাংকের ধারণা, রাশিয়ার উপর কার্যকর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বিশ্ব তেলের বাজারকে আরও কঠোর করে তুলতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বিকল্প পাওয়া যায়নি।

রাশিয়া-ইউক্রেনের এ লড়াইয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কারণ এ দুটি দেশ আগে থেকেই রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল না। তবে একই সময়ে, ইউরোপীয় দেশগুলো বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে তারা রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এর কোনো বিকল্প তারা তৈরি করেনি। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ করে আসন্ন শীতের সময় ইউরোপীয় দেশগুলো বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।