ফিলিস্তিনিদের পানিতে বিষ মেশাতে চেয়েছিল ইসরায়েল!

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের বাস্তচ্যুত করতে ইসরায়েলি সৈন্যরা বিভিন্ন আরব বসতির পানির কুপে বিষ মিশিয়েছিল অথবা মেশাতে চেয়েছিল বলে এতদিন শোনা গেছে। এবার বিষয়টি সত্য বলে নিশ্চিত করেছে খোদ ইসরায়েল সরকার। সম্প্রতি ইসরায়েল সরকার বেশকিছু গোপনীয় নথি অবমুক্ত করেছে যেখানে ফিলিস্তিনিদের কুপে বিষ মেশানোর ষড়যন্ত্রে ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়নের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ রয়েছে।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের বাস্তচ্যুত করে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়

ইসরায়েলি দৈনিক হারিৎজের প্রতিবেদনে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মিত্র বাহিনীর হাতে বন্দী জার্মান কয়েদীদের রুটিতে বিষ মিশিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল ইহুদী গুপ্ত সংগঠন নাকাম। এই নাকাম বা কথিত ইহুদী অ্যাভেঞ্জার্সদের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে একই পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে ইসরায়েল সরকার।

এতদিন অনেকে গুজব বলে মনে করলেও নতুন নথিতে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলি সৈন্যরা ফিলিস্তিনিদের পানীয় জল দূষিত করার চেষ্টা করেছিল। বেন-গুরিয়নের সরাসরি নির্দেশনায় তারা ফিলিস্তিনি বসতিগুলোর ব্যবহৃত পানির কুপে বিষ মেশানোরও চেষ্টা চালায়।

‘কাস্ট দাই ব্রেড’ বা ‘তোমার নিজের রুটি বানিয়ে নাও’ ছদ্মনামে এক গোপন অভিযানের আওতায় ফিলিস্তিনের আরব বসতিগুলোর আশেপাশের পানির কুপে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ইসরায়েল সরকারের। একতরফা ও আকষ্মিকভাবে ঘোষিত ইসরায়েল রাষ্ট্রকে বড় করতে জায়গা খালি করা জরুরি ছিল। এজন্য আরব বসতির পাশাপাশি কিছু ইহুদী পরিবারের পানীয় জলেও বিষ মেশানোর পরিকল্পনা ছিল।

ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা উপত্যকা ও বর্তমানে ইসরায়েলের দখলকৃত আরব জনপদ আকরের পানিতে ইসরায়েলি সৈন্যরা বিষ মেশাতে চেয়েছে এ মর্মে ১৯৪৮ সালেও খবর বেরিয়েছিল। তবে নাশকতার ব্যাপকতা সম্পর্কে কারও ধারণা ছিল না। ইসরায়েল সরকারের নথির ভিত্তিতে হারিৎজের তৈরিকৃত প্রতিবেদনে ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ও জেনারেলদের সংশ্লিষ্টতা ও ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত উঠে এসেছে।

খোদ বেন-গুরিয়নের ডায়েরিও এ পরিকল্পনার সাক্ষ্য হয়ে আছে। ১৯৪৮ সালের ১ এপ্রিল বেন-গুরিয়ন তার ডায়েরিতে ‘বিজ্ঞান চর্চার বিকাশ ও যুদ্ধে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ত্বরান্বিত করার’ কথা লেখেন। দেড় মাস পর তিনি ২ হাজার ডলার ব্যয়ে ‘বায়োলজিক্যাল মেটিরিয়ালস’ কেনার কথা লেখেন। চালাক গুরিয়ন নিজের ডায়েরিতে সহকর্মীদের নাম স্পষ্ট উল্লেখ করেননি।

ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ান কাস্ট দাই ব্রেড অভিযানে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। গোপনীয়তার স্বার্থে অভিযানের নথিগুলোয় তার নাম পাল্টে মোশে নেপচুন লেখা হয়। মোশে নেপচুনের মাধ্যমেই বেন-গুরিয়নের নির্দেশনা জেনারেলদের কাছে পাঠানো হয়।

মোশে নেপচুন ইসরায়েলি সেনাসদরে পাঠানো এক বার্তায় লেখেন- কাস্ট দাই ব্রেডের বিষয়গুলো দেখভালের জন্য আপনাদের সদর দপ্তরে অবিলম্বে একজন বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা জরুরি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনাদের তা অতি গোপনীয়ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। সোম অথবা মঙ্গলবার নেহশন (ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হারেল ব্রিগেডের আওতাধীন নেহশন ফোর্সেস) কাস্ট দাই ব্রেড শুরু করবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আমি সপ্তাহের মাঝামাঝি আসবো।

দায়ান আরও লেখেন- অভিযান সফল হলে বেশকিছু জায়গা খালি করা হবে। আমরা যেসব জায়গা খালি করবো সেখানে ‘বি’ (হিব্রু বর্ণমালার অক্ষর বেত, আরবি বায়ত, যার অর্থ ঘর-বসতি) ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে।