বের করে দেওয়া হলো সাবেক চীনা প্রেসিডেন্টকে

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে দলের নেতা ও চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওকে। আজ সকালে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে এ ঘটনা ঘটে। হু জিনতাও তার উত্তরসূরি ও চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পাশে বসা ছিলেন। সম্মেলনের প্রস্তাবনার ওপর ভোট শুরুর ঠিক আগে মঞ্চ থেকে তাকে অনেকটা জোর করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।

শি জিনপিংয়ের পাশের চেয়ার থেকে উঠিয়ে সম্মেলন ক্ষের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় হু জিনতাওকে

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে আজকের ঘটনাটি দলের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন পর্যবেক্ষকরা। সম্মেলনের প্রস্তাবনার ওপর ভোট গ্রহণের শুরুতে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের। কমিউনিস্ট পার্টির চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কমিউনিস্ট পার্টির ২ হাজার ৩০০ ডেলিগেট এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে হু জিনতাওকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।

শি জিনপিংয়ের আগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হু জিনতাও। ২০০৩-২০১৩ পর্যন্ত এক দশক চীনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সম্মেলন মঞ্চে শি জিনপিংয়ের বাম পাশের চেয়ারটিতে তার আসন ছিল। সেখান থেকে তাকে সবার সামনে উঠিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। সাংবাদিকরা সম্মেলন কক্ষে ঢোকার পরপর এ ঘটনা ঘটায় অনেক মনে করছেন শি জিনপিং পরিকল্পিতভাবেই সবাইকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে এখন তার ওপর কারো কথা চলবে না।

সিপিসি পলিট ব্যুরোতে তুয়ানপাই গ্রুপের নেতা হিসেবে পরিচিত হু জিনতাও। কোনো কোনো প্রচারমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কের পক্ষে এবং তাইওয়ানের ওপর বলপ্রয়োগের বিপক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন তিনি। তাইওয়ানের স্বাধীনতার দৃঢ় বিরোধিতাকে দলের গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে এবারের সম্মেলনে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে সিপিসি।

ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, শি জিনপিংয়ের পাশের আসনে বসেছিলেন হু জিনতাও। এমন সময় দুইজন স্টুয়ার্ড এসে পেছন থেকে তার কানে কানে কিছু একটা বলেন। একপর্যায়ে একজন স্টুয়ার্ড দুদিক থেকে হাত বাড়িয়ে ৭৯ বছর বয়সী হু জিনতাওকে পাঁজাকোলা করে চেয়ার থেকে ওঠানোর চেষ্টা করেন। হু তার ডানদিকে বসা শি জিনপিংয়ের সামনে টেবিলে রাখা ফোল্ডার হাতে টানার চেষ্টা করেন। শি জিনপিং এ সময় হাত বাড়িয়ে নিজের ফোল্ডার ফিরিয়ে নেন।

একজন স্টুয়ার্ড হু জিনতাওর ফোল্ডার হাতে নেন। অন্যজন তার পিঠে হাত রেখে উঠতে বলেন

হু জিনতাওর বাম পাশের চেয়ারে ছিলেন চীনা পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার লি ঝাংশু। স্টুয়ার্ডরা হু জিনতাওকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে লি ঝাংশু হাত বাড়িয়ে হু জিনতাওর ফোল্ডারটি একজন স্টুয়ার্ডের হাতে তুলে দেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে হু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। এরপর দুই স্টুয়ার্ড তাকে ধরে বাইরে নিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। শি জিনপিংয়ের পেছনে এসে হু খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে নিজের উত্তরসূরিকে কিছু একটা বলেন। শি এ সময় মাথা নেড়ে তাতে সম্মতি জানান।

শির ডানদিকের চেয়ারে ছিলেন চীনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং, যাকে কেউ কেউ হু জিনতাওয়ের ভাবশিষ্য মনে করেন। সম্মেলনস্থল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় হু তার শিষ্যের কাঁধে হাত রাখার চেষ্টা করেন। লি চুপচাপ বসে ছিলেন। হু জিনতাওকে চেয়ার থেকে ওঠানোর চেষ্টার শুরু থেকে পুরো ঘটনাটি বিষ্ময়ের চোখে তাকিয়ে ছিলেন একই সারিতে বসা পলিট ব্যুরো সদস্য লি কেকিয়াং, লি ঝাংশু, হান ঝেং ও ওয়ান ইয়াং। জানা গেছে, এদের সবাইকে এবার পলিট ব্যুরো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সারা দেশ থেকে আসা সিপিসি ডেলিগেটদের পাশাপাশি নজিরবিহীন এ ঘটনা দেখেছেন সাংবাদিকরা। এএফপিসহ কয়েকটি সংবাদ সংস্থার বরাতে ঘটনার ফুটেজ দেখেছেন বিশে^র অসংখ্য মানুষ। কেন এভাবে শি জিনপিংয়ের সামনে তার পূর্বসুরিকে এমন অপমানজনকভাবে সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা চীনা কমিউনিস্ট দেয়নি। চীনা গণমাধ্যম সিপিসি সম্মেলনের প্রতিবেদনে এ ঘটনা বেমালুম চেপে গেছে। চীন সরকারের ওয়েবসাইট কিউশি থেকেও হু জিনতাওয়ের নাম ও তাকে নিয়ে সব রেফারেন্স মুছে ফেলা হয়েছে।