কিয়েভের অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

একসময় যা অকল্পনীয় ছিল, এখন তাই সত্য হতে পারে বলে ভাবছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। গত জুলাই মাসে ইউরোপে বিদ্যুৎ রপ্তানির ঘোষণা দেওয়া দেশটির কর্মকর্তারা এখন খোদ রাজধানী কিয়েভেই বিদ্যুতের অভাবে পুরোপুরি অন্ধকার নেমে আসতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন। এজন্য তারা এখন কিয়েভে অবস্থানরত ৩০ লাখ অধিবাসীকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস।

সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয় কিয়েভ, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে...

কিয়েভের মিউনিসিপ্যাল সিকিউরিটি সার্ভিসের পরিচালক রোমান টকাচুক বলেছেন, কিয়েভ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা দিনকে দিন জোরালো হচ্ছে। রাশিয়া যদি হামলা অব্যাহত রাখে তাহলে আমাদের শহর পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়বে। আমরা বিষয়টি মাথায় রেখেই শহরের ৩০ মিলিয়ন (তিন কোটি) অধিবাসীকে আরও স্থিতিশীল কোনো জায়গায় স্থানান্তরের কথা বিবেচনা করছি।

এর আগে শুক্রবার ইউক্রেনের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ইউক্রেনার্গো ঘণ্টাওয়ারি লোডশেডিং ব্যবস্থা বাতিল করে জরুরি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্নতা প্রবর্তনের ঘোষণা দেয়। সংস্থাটি বলেছে, এতদিন পূর্বঘোষণার ভিত্তিতে ঘণ্টাওয়ারি লোডশেডিংয়ের যে ব্যবস্থা চলছিল, তা এখন আর জারি রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ট্রান্সফরমার বিধ্বস্ত ও নিষ্ক্রিয় হতে থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমশ কমছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পূর্বঘোষণা ছাড়াই যখন যেখানে প্রয়োজন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

কিয়েভের কর্মকর্তারা বলেছেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে রুশ বাহিনীর ধারাবাহিক মিসাইল ও ড্রোন হামলার কারণে জাতীয় গ্রিডে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কখন কোথায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে তা বলা সম্ভব নয়। এভাবে হামলা অব্যাহত থাকলে দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো ইউক্রেন অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। কিয়েভে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধের ক্ষেত্রে ইউক্রেনার্গোর পক্ষ থেকে নগর কর্তৃপক্ষকে ১২ ঘণ্টার আগাম নোটিশ দেওয়া হবে।

নগরীর মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো বলেছেন, পুরোপুরি অন্ধকার হবার আশঙ্কা তো রয়েছেই, এমনিতেও কিয়েভে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি খুব খারাপ। শহরের আবাসিক এলাকাগুলোয় সাড়ে চার লাখের বেশি ফ্ল্যাটবাড়িতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎ নেই। প্রতিদিন সকালে মিউনিসিপ্যালিটির ভাউচার থেকে পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন নাগরিকরা।

আসন্ন শীতে শহরবাসীকে উষ্ণ রাখতে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ এক হাজার হিটিং শেল্টার তৈরি করছে। আশ্রয়প্রাপ্তরা শীতে উষ্ণ থাকার পাশাপাশি বোমা ও মিসাইল হামলা থেকে যাতে সুরক্ষা পান, সেজন্য বাঙ্কারের আদলে তৈরি করা হচ্ছে এসব হিটিং শেল্টার।

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশের বেশি এরইমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। দেশটির বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য শনিবার ইউক্রেনার্গোর এক ঘোষণায় সাতটি অঞ্চলে একটানা ব্ল্যাকআউট থাকবে বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বিধ্বস্ত কেন্দ্রগুলো পুনরায় সচল করার চেষ্টা চলছে।

ইউক্রেনের জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত ১০ অক্টোবর থেকে রুশ বাহিনীর মিসাইল ও ড্রোন হামলার প্রথম দফায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবস্টেশনের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামতে বিদ্যুৎ বিভাগের মজুত যন্ত্রপাতির পুরোটাই শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে মেরামত ও বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল করতে হলে বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হবে।