রাশিয়া: শস্য করিডর চুক্তির সংস্কার জরুরি

কৃষ্ণ সাগরীয় বিভিন্ন বন্দর থেকে শস্য রপ্তানির সুবিধার্থে নিরাপদ নৌ করিডর প্রতিষ্ঠায় তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তার সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে রাশিয়া। বিশ্বে খাদ্যাভাব দূরীকরণের কথা বলে চুক্তি হলেও এর আওতায় রপ্তানিকৃত শস্যের সামান্যই দরিদ্র দেশগুলোতে গেছে উল্লেখ করে রাশিয়া বলেছে, আফ্রিকা ও এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোতে অধিকতর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে চুক্তিটি সংস্কার করতে হবে। খবর তাস।

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় জুলাই মাসে শস্য করিডর চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া ও ইউক্রেন

আজ সকালে ইস্তাম্বুলে তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সের্গেই ভারশিনিন উপরের কথাগুলো বলেছেন। ভারশিনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধিদল তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেন পরিস্থিতি, শস্য করিডর চুক্তি বাস্তবায়ন, সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা, আঙ্কারা-দামেস্ক সংলাপসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সেদাত ওনাল বৈঠকে তার দেশের নেতৃত্ব দেন।

সের্গেই ভারশিনিন বলেন, শস্য করিডর কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত রপ্তানিকৃত বেশিরভাগ খাদ্যপণ্য ইউরোপের দেশগুলোতে গেছে। রাশিয়া বিশ্বাস করে, যেসব দেশে খাদ্য দরকার, সেখানে শস্য পৌঁছাতে হলে চুক্তিটি ঠিক করতে হবে। রাশিয়ার কৃষিপণ্য রপ্তানিতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে কেবল বিবৃতি না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে। রাশিয়া থেকে খাদ্য সররবাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বিশেষত লাটভিয়া ও অন্য কয়েকটি জায়গায় রাশিয়ার কৃষি পণ্যের চালান আটকে দেওয়ার যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রুশ ফেডারেশনের কাছে বিপুল পরিমাণ কৃষি পণ্য ও সার মজুত রয়েছে। তবে এসব মজুতে অন্যান্য দেশের অবাধ এক্সেস নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শস্য করিডর চুক্তি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, এমন কিছু রাশিয়ার দৃষ্টিগোচর হয়নি। সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তার আওয়াজ তুলে শস্য করিডর চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু রপ্তানির চিত্র ও পরিসংখ্যান ওই দাবিকে সমর্থন করছে না। ইউক্রেনের বন্দর থেকে যাওয়া খাদ্য শস্য দরিদ্র দেশগুলোতে পৌঁছাচ্ছে না।

ভারশিনিন বলেন, রাশিয়া থেকে বিনামূল্যে সার সরবরাহের বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের যোগাযোগ চলছে। রাশিয়া থেকে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ রপ্তানির সুযোগ তৈরির বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কথায় ও কাজে ফারাক রয়েছে।

তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা হয়েছে মন্তব্য করে রুশ উপমন্ত্রী বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপের জন্যও ইস্তাম্বুলকে ‘আরামদায়ক জায়গা’ মনে করি। যদিও ওয়াশিংটন এখনো গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে আলোচনায় এসেছে বলে আমরা মনে করি না।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আলা-আসাদের মধ্যে বৈঠক আয়োজনে মস্কো মধ্যস্থতা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া সবসময় তুরস্ক ও সিরিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পক্ষে। দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার কাজটি সহজ হবে। রাশিয়া বিশ্বাস করে যে তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় সংলাপ হলে সেটা দুই দেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই হতে হবে।

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তুরস্কের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে আমরা ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর অতিমাত্রায় আগ্রাসী মনোভাব সম্পর্কে যতদূর সম্ভব বিস্তারিত জানিয়েছি। জাপরোঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে তারা দায়িত্বহীনভাবে বারবার আক্রমণ করছে। আমরা এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।