ইইউ পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত

কাতারের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইভা কাইলিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ইইউ পার্লামেন্ট গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইভা কাইলির পদের মেয়াদে ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায়। খবর হিন্দুস্তান টাইমস।

ইভা কাইলি

বিবৃতিতে জানানো হয়, ইভা কাইলিকে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাবের ওপর মঙ্গলবার সকালে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রস্তাবের পক্ষে ৬২৫ ভোট পড়ে, বিপক্ষে পড়ে এক ভোট। দুইজন সদস্য ভোটদানে অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে একটি রেজুলেশনে ভোট নেওয়া হবে।

ইইউ পার্লামেন্টের প্রধান রবার্টা মেটসোলা একটি টুইটে জানান, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং আমরা প্রাসঙ্গিক জাতীয় আইন প্রয়োগকারী ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

গত শুক্রবার বেলজিয়ামের পুলিশ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গ্রিসের মধ্য-বামপন্থী পাসোক-কিনাল পার্টির সদস্য ইভা কাইলিকে ব্রাসেলসের বাড়ি থেকে আটক করে। তার পরিবারের আরও এক সদস্যকে সেখান থেকে আটক করা হয়।একই সময় ব্রাসেলসে আরও দুইজন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্যর বাসভবনসহ মোট ১৬ টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়।

তল্লাশি অভিযানে ইভা কাইলির বাসভবন থেকে দেড় লাখ ইউরো, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আরেক সদস্যর ফ্ল্যাট থেকে ছয় লাখ ইউরো, ব্রাসেলসের একটি হোটেলে এক সন্দেহভাজনের রুম থেকে সাড় সাত লাখ ইউরোসহ বেশকিছু কম্পিউটার, মোবাইল ডিভাইস জব্দ করা হয়। পুরো অভিযানে ইভা কাইলিসহ চারজনকে আটক করা হয়। পরদিন শনিবার তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

কাইলি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৪ জন ভাইস প্রেসিডেন্টের অন্যতম। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাকে পার্লামেন্টের সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস গ্রুপ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গ্রিসের পাসোক পার্টিও তাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। 

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট জানিয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তারা একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করবে। তবে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতার এ অভিযোগ খারিজ করে বলেছে, দোহা এ ধরনের সমস্ত অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বকাপ আয়োজনের পুরো প্রক্রিয়াটি কাতার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করেছে। ঘুষ লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ অসত্য ও ভিত্তিহীন। 

ইইউর পার্লামেন্টের সদস্যদের ঘুষ গ্রহণের এই অভিযোগকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন। এ পরিস্থিতিতে তিনি ইইউতে নৈতিকতা-বিষয়ক নতুন একটি সংস্থা গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ইভা কাইলির আইনজীবী মিকালিস দিমিত্রাকোপুলোস গতকাল মঙ্গলবার গ্রিক টিভিকে বলেছেন, ইভা কাইলি কাতার থেকে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় কোনোরকম সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। ইভা কাইলির বাসভবন থেকে দেড় লাখ ইউরো জব্দের খবর সঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাসভবনে আদৌ কোনো অর্থ পাওয়া গেছে কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই। 

উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একমাত্র সরাসরি নির্বাচিত সংস্থা। ইইউর ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত ৭০৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য (এমইপি) ইউরোপে প্রস্তাবিত যে কোনো আইন যাচাই-বাছাই এবং পাস করে থাকেন। ইউরোপীয় কমিশনের সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতেও কাজ করে স্ট্রাসবুর্গে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠান।