বিবিসির সেই তথ্যচিত্র ব্লক করে দিয়েছে ভারত

২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে করা বিবিসির একটি তথ্যচিত্রের সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও এই তথ্যচিত্রের কোনো অংশ শেয়ার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা শনিবার টুইটারে জানিয়েছেন, বিবিসি তথ্যচিত্রের একাধিক ইউটিউব ভিডিও এবং ভিডিওগুলোর লিঙ্কসহ ৫০টিরও বেশি টুইট সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেছেন, তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০২১ এর অধীনে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে বিষয়বস্তুটি ব্লক করা হয়েছে। ইউটিউব এবং টুইটার উভয়েই এই নির্দেশনা মেনে নিয়েছে।  

১৭ জানুয়ারি ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ নামের তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব বিবিসিতে প্রচারিত হয়। এই তথ্যচিত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে গুজরাটে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় মোদির ভূমিকা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এই তথ্যচিত্রটি প্রচারের আগ পর্যন্ত গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন কখনই প্রকাশ করা হয়নি।   

দুই পর্বের এই তথ্যচিত্রে একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে মোদির প্রথম বছর এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মাধ্যমে তার উত্থান পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

বিবিসির তথ্যচিত্র অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে গুজরাট দাঙ্গাকে ‘সহিংসতার পদ্ধতিগত প্রচার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দাঙ্গায় জাতিগত নির্মূলের সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। দাঙ্গার সরাসরি দায় মোদির ওপর চাপানো হয়েছে।

এই তথ্যচিত্রে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র এর সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, 'তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদি পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে এবং হিন্দু চরমপন্থীদেরকে নির্বিকারভাবে উৎসাহিত করতে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।'  

এদিকে ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০০২ সালের সহিংসতার সময় মুসলিম নারীদের ব্যাপকভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এতে আরও বলা হয়েছে দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিল, মুসলমানমুক্ত হিন্দু এলাকা সৃষ্টি করা। সমালোচকরা বলছেন, বর্তমানে এটিই বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডার অধীনে রাষ্ট্রীয় নীতি হয়ে উঠেছে। 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সংঘটিত গুজরাট দাঙ্গার সময় মোদি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সাম্প্রদায়িক ওই দাঙ্গায় হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। নিহতদের বেশিরভাগই মুসলিম ছিলেন। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হওয়ার পর রাজ্যজুড়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হয়েছিল। কিন্তু সহিংসতা থামানোর জন্য মোদি কোন চেষ্টাই করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র: আল জাজিরা