যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের চরকায় তেল দিতে বলল চীন

অন্য দেশের ঋণ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের চরকায় তেল দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তা কমিয়ে আনার প্রতি নজর দিতে ওয়াশিংটনকে পরামর্শ দিয়েছে বেইজিং।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সম্পর্ক

জাম্বিয়া চীন থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারায় চীনকে সে ঋণ মাফ করে দেওয়ার আহ্বান জানান মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। তার জবাবে জাম্বিয়ায় চীনা দূতাবাস এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত জাম্বিয়ার ঋণ মাফের জন্য বেইজিংকে চাপ দেওয়া বন্ধ করা এবং নিজেদের সরকারি ঋণ কমিয়ে আনার দিকে মনোনিবেশ করা। কারণ এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিজ দেশের বাইরের ঋণ বিষয়ক সমস্যার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অবদান হবে, তার নিজের ঋণ সমস্যা মোকাবেলা করা এবং অন্যান্য সার্বভৌম দেশগুলোর ঋণ সমস্যা সমাধানে সক্রিয় প্রচেষ্টার মধ্যে নাশকতা বন্ধ করা।

জ্যানেট ইয়েলেন

যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে পরিমাণ (৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার) ঋণ নিতে পারে, গত বৃহস্পতিবার তারা সেই সীমানায় পৌঁছে যায়। মার্কিন সরকার স্বল্পমেয়াদে যেন তার বিল পরিশোধ চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য মার্কিন অর্থমন্ত্রী সাময়িক একটি ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। এরপর জাম্বিয়া সফরে এসে তিনি বলেন, চীনের সাথে তার ভারী ঋণের বোঝা মোকাবেলা করা জাম্বিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার সাথে রয়েছে উল্লেখ করে এ সময় তিনি আফ্রিকার জন্য উপকারী একটি মার্কিন অর্থনৈতিক কৌশলের ফল ঘোষণা করেন।

চীনের দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের ঋণ সমস্যার সমাধান করলেও, অন্য দেশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ বা চাপ দেওয়ার যোগ্য নয়।

বোস্টন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের তথ্য অনুসারে, কয়েক দশক ধরে চীনা উন্নয়ন ব্যাংকগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন ও বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর প্রধান ঋণদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে সেই ঋণপ্রবাহ ২০১৬ সাল থেকে তীব্র ও অবিচ্ছিন্নভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে চীন ১৫১টি প্রকল্পে ৮০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল, ২০২১ সালে সেটি আটটি প্রকল্পে তিন দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

বর্তমানে ২২টি নিম্ন-আয়ের আফ্রিকান দেশ এ ঋণ নিয়ে জটিলতার মধ্যে পড়ে গেছে। এসব দেশে সরকারি ও ব্যক্তিগত খাতের ঋণের ১২ শতাংশই এককভাবে দিয়েছে চীন। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ ঋণের পরিমাণ পাঁচ গুণেরও বেশি বেড়েছে।

দরিদ্র দেশগুলো চীনের কাছ থেকে ঋণ নিলেও যথাসময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। জাম্বিয়া ২০২০ সালের নভেম্বরে চীনের সোয়া চার কোটি ডলারের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্য দেশগুলোর অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়। এ অবস্থায় দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ মওকুফে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী।