ইউক্রেন: আমাদের পরবর্তী চাহিদা জঙ্গি বিমান

নানা দেনদরবারের মাধ্যমে ন্যাটো মিত্রদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ট্যাংক সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ার পর এখন ইউক্রেন অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমানের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। কিয়েভ জানিয়েছে, রুশ হামলা মোকাবেলায় তারা এখন মার্কিন এফ-১৬ এর মতো চতুর্থ প্রজন্মের জঙ্গি বিমান চাইবে। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্স।

এফ-১৬ জঙ্গি বিমান

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন বিভিন্ন দেশের কাছে সামরিক সহায়তা কামনা করে। তার প্রেক্ষিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপে অনেক দেশই ইউক্রেনকে হালকা অস্ত্র সরবরাহ করে। কিন্তু ইউক্রেন তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে জার্মানির অত্যাধুনিক লেপার্ড ২ ট্যাংক চেয়ে বসে। রাশিয়ার সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জার্মানি প্রথমে ইউক্রেনকে সে ট্যাংক দিতে রাজি হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্রদের চাপের কারণে চলতি সপ্তাহে ওই ট্যাংক দিতে রাজি হয় বার্লিন।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভের উপদেষ্টা ইউরিই সাক বলেন, আমাদের পরবর্তী চাহিদা জঙ্গি বিমান। এগুলো হাতে পেলে আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে বড় আকারের সুবিধা পাব। এক্ষেত্রে আমরা শুধু এফ-১৬ নয়, বরং চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান চাই।

লেপার্ড ২ ট্যাংক

বিষয়টি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ইউরিই সাক। তিনি বলেন, মিত্ররা আমাদেরকে প্রথমে ভারী কামান দিতে চায়নি, কিন্তু পরে দিয়েছে। একইভাবে হাইমার্স ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দিতে না চাইলেও পরে দিয়েছে। ফলে আমরা আশা করছি, পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া তাদের কাছ থেকে আমরা সবকিছু পাবো।

সাকের এ ধরনের মন্তব্যের জবাবে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ জানান, ইউক্রেনে জঙ্গি বিমান পাঠানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই। যুদ্ধের একেবারে শুরুতেই আমি বিষয়টি পরিষ্কার করেছি। যুদ্ধ বিমান পাঠানোর বিষয়টি কখনোই আলোচনায় ছিল না এবং এখনো নেই। একই সাথে এটিও পরিষ্কার করে দিতে চাই, এ যুদ্ধে কোনো অবস্থাতেই পদাতিক সেনা পাঠানো হবে না। আমি আগেই বলেছি, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সেনাবাহিনী সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে না। এর ব্যত্যয় এখন পর্যন্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এ বিষয়ে সবাই আস্থা রাখতে পারেন।

শোলজ জানান, জার্মানিসহ পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে অব্যাহত সহায়তা দেবে। কিয়েভের চাহিদার যতটুকু সম্ভব, তা করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। কিন্তু একইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, এই যুদ্ধ যেন রাশিয়া বনাম ন্যাটোর যুদ্ধে পরিণত না হয় সেদিকেও।

এদিকে জার্মানির ট্যাংক পাওয়ার আগেই যেমন সে ট্যাংক চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিল ইউক্রেনীয় সেনারা, তেমনি মার্কিন জঙ্গি বিমান লাভের প্রত্যাশায় গত মাস থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইউক্রেনের পাইলটরা। জ্যুস নামের এক ইউক্রেনীয় পাইলট বলেন, গত মাস থেকে তাদের মধ্যে অনেকেই ইংরেজি শিখতে শুরু করেছেন। তাদের প্রত্যাশা, কিয়েভ শিগগিরই এফ-১৬'র মতো অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমান পেতে পারে, যা পরিচালনার জন্য ইংরেজি জানার দরকার পড়তে পারে।

ইউক্রেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পরোশেনকো জানান, রুশ মোকাবেলায় আমাদের জন্য পরবর্তী উল্লেখযোগ্য অস্ত্র হতে পারে জঙ্গি বিমান। এসব বিমান যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তাই আমাদের উচিত জরুরি ভিত্তিতে ইউক্রেনের পাইলটদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং দ্রুত এসব জঙ্গি বিমান তাদের কাছে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নেওয়া।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কাছে ৩১ বছর আগে নির্মিত সোভিয়েত আমলের পুরনো কিছু জঙ্গি বিমান রয়েছে। রাশিয়ার আধুনিক অস্ত্রের মোকাবেলায় সেগুলো নিতান্তই অকার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।