'মনে হচ্ছিল, কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে'

অন্য দিনের মতো সোমবার রাতেও পরিবারের সাথে ঘুমিয়েছিলেন তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের বাসিন্দা মেলিসা সালমান। কিন্তু ভোরে যখন তার ঘুম ভাঙে, তখন তিনি যেন কেয়ামত প্রত্যক্ষ করছিলেন। তার মতো এমন অনুভূতি তুরস্ক-সিরিয়ার হাজারো মানুষের। খবর সিএনএন।

পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্কের বেশ কিছু এলাকা

মেলিসা বলেন, ভোরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমি মনে করেছিলাম, বোধ হয় কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। তিনি জানান, আমি জানি এ এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ। সে কারণে বাড়ি-ঘরে ঝাঁকুনিতে আমি মোটামুটি অভ্যস্ত। তবে সোমবারের দিনটা ছিল সত্যিই অন্যরকম। এবারের অভিজ্ঞতাটা আমাদের জীবনে প্রথম। ফলে আমি মনে করেছিলাম, কেয়ামত বুঝি শুরুই হয়ে গেছে।

সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে সাত দশমিক আট মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। পার্শ্ববর্তী দেশ লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসেও এ কম্পন অনুভূত হয়।

রাতেও চলছে উদ্ধার কাজ

মেলিসার মতো একই অনুভূতি সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের সারমাদা শহরের বাসিন্দা আনাস আব্বাসেরও। ভূমিকম্পের সময়কে তার কাছে কেয়ামত বলে মনে হয়েছিল। চোখের সামনে একের পর এক ধসে পড়ছে ভবন, বাড়ি। যেখানে একটু আগে বাড়ি ছিল, এখন সেখানে শুধুই ফাঁকা। তিনি বলেন, সিরিয়ার যুদ্ধের মধ্যেও আমার এমন অনুভূতি হয়নি।

তুরস্কের আবহাওয়া অফিসসূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে। এর উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টের পর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ছিল এটি।

ভূমিকম্পে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুরস্ক ও সিরিয়া মিলে ৪ হাজার ৩০০ মানুষের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুই দেশে আহত হয়েছেন আরও ১০-১৫ হাজার লোক। ধসে পড়েছে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ভবন।

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে জানান, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল মাঠে কাজ করছে। বিবিসি ওয়েদার বলছে, কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, তুরস্কের ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় আগামী কয়েক দিন ভারি বৃষ্টি ও তুষারপাত হতে পারে। সেখানে দিনের তাপমাত্রা থাকবে মাত্র ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে সেটা আরও কমে যেতে পারে।

আর তুষারপাতের কারণে ওই এলাকা ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার গভীর তুষারে ঢেকে যেতে পারে। তুরস্কের উত্তরের পাহাড়ি এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে। কারণ সেখানকার পাহাড়ে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত তুষারপাত হতে পারে। সব মিলিয়ে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হবে। এরপরও ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।