স্পেনে রেললাইনের তার চুরি: নাশকতা সন্দেহ, হাজারো যাত্রীর চরম ভোগান্তি

স্পেনের হাই-স্পিড রেল নেটওয়ার্কে তার চুরির ঘটনায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ও সোমবার সকালে মাদ্রিদ-সেভিয়া সংযোগকারী লাইনের চারটি ভিন্ন স্থান থেকে তার চুরির পর এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়, যার ফলে হাজার হাজার যাত্রীর ভ্রমণ ব্যাহত হয় এবং অনেকে পথিমধ্যে আটকা পড়েন। স্পেনের পরিবহন মন্ত্রী এটিকে সাধারণ চুরির পরিবর্তে পরিকল্পিত নাশকতা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

ছবি - সংগৃহীত

দীর্ঘ সপ্তাহান্তের ছুটি ও স্প্যানিশ মা দিবস শেষে মাদ্রিদ থেকে দক্ষিণে ফেরা বহু যাত্রী এই ঘটনায় চরম ভোগান্তির শিকার হন। দেশের পরিবহন মন্ত্রী অস্কার পুয়েন্তে সোমবার সকালে সম্প্রচারমাধ্যম ক্যাডেনা সের-কে বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনায় হওয়া ক্ষতির তুলনায় আর্থিক লাভ অতি নগণ্য। আমি এটাকে চুরি বলতে চাই না – বরং অন্তর্ঘাত (নাশকতা) বলাই শ্রেয়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘চারটি ভিন্ন জায়গায় খুব কম মূল্যের ক্যাবল চুরি করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি পরিকল্পিত ঘটনা। যারা এটি করেছে, তারা ভালো করেই জানত তারা কী করছে, কারণ এই এলাকায় কোনও ক্যামেরা ছিল না।’

স্পেনের রেল পরিচালনাকারী সংস্থা রেনফে'র প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) জানান, তার চুরির ঘটনার পাশাপাশি আরও একটি ট্রেন কারিগরি ত্রুটির শিকার হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ওই ত্রুটির ফলে একটি ওভারহেড বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে নিচে নেমে আসে।

রেল পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ায় রেনফে টোলেডো, পুয়ের্তোলানো এবং আন্দালুসিয়াগামী যাত্রীদের স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মাদ্রিদের অ্যাটোচা স্টেশনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়। পরে সংস্থাটি জানায়, ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টারও বেশি সময় পর, সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রুটে ধীরে ধীরে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হবে।

রেনফে'র তথ্যমতে, এই ঘটনায় প্রায় ৩০টি ট্রেনের ১০,৭০০ যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যের মাঝে আটকা পড়েন। স্প্যানিশ ব্রডকাস্টার আরএনই-র প্রতিবেদক জেসাস নাভারোও ক্ষতিগ্রস্তদের একজন। তিনি জানান, তাকে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ট্রেনে আটকা থাকতে হয়েছে। তিনি এটিকে এক ‘ভয়ানক সকাল’ হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ট্রেনটিকে সচল করার জন্য একটি ডিজেল লোকোমোটিভ এসে এটিকে টেনে এমন একটি স্থানে নিয়ে যায় যেখান থেকে এটি পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পারে।’

আরও হাজার হাজার যাত্রীর ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বা মারাত্মক বিলম্বের শিকার হয়েছে, কারণ সোমবার বিকেলেও রেল পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

উল্লেখ্য, দেশব্যাপী ব্ল্যাকআউটের কারণে স্পেনে রেল যোগাযোগে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই তার চুরির ঘটনা ঘটল, যা দেশটির রেল ব্যবস্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।