তুরস্কে পুতিনের মুখোমুখি হওয়ার আশাভঙ্গ জেলেনস্কির

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধে আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। তবে তাতে যোগ দিচ্ছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের পর ওই সম্মেলনে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। আর এতে বৈঠকের সাফল্যের সম্ভাবনা তিরোহিত হলো বলেই শঙ্কা বিশ্লেষকদের। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

তুরস্কের মধ্যস্থতায় প্রথম সরাসরি শান্তি আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই।

জেলেনস্কি বলেছেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনায় যোগ দেবেন তিনি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সম্মত হলে তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করবেন। পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন তিনি।

তবে শেষপর্যন্ত জানা গেল, ইস্তাম্বুলের বৈঠকে যোগদানের জন্য ক্রেমলিনের তালিকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম নেই । ক্রেমলিনের বিবৃতি অনুযায়ী, রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন রুশ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি ও উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিন।

এদিকে ক্রেমলিনের বিবৃতির পর যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইস্তাম্বুলে আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপস্থিত থাকছেন না। যদিও পুতিন উপস্থিত থাকলে নিজে হাজির হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফররত ট্রাম্প।

এর আগে শনিবার কিয়েভে ইউরোপীয় নেতাদের বৈঠক হয়। এর পরই ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনার পরামর্শ দেন পুতিন। রবিবার রুশ প্রেসিডেন্ট নিজেই প্রস্তাব করেন, ইস্তাম্বুলে কিয়েভের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি মস্কো।

যদিও আলোচনায় নিজের অংশ নেওয়ার ব্যাপারে একবারও আভাস দেননি পুতিন। তবে তিন বছরের যুদ্ধে পুতিনের পক্ষ থেকে প্রথম এই ধরনের কোনো প্রস্তাব আসায় রুশ প্রেসিডেন্টের ইস্তাম্বুল যাওয়া নিয়ে চলছিল জল্পনা-কল্পনা।

আবার মধ্যপ্রাচ্যে সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, পুতিন যদি বৈঠকে যোগ দেন তবে তিনিও বৈঠকে যোগ দিতে পারেন।

পুতিন যখন সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন, তাকে স্বাগত জানিয়ে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের জন্য একটি সম্ভাব্য দুর্দান্ত দিন!

এদিকে দুই নেতার তুরস্কে আসার সম্ভাবনা দেখে জেলেনস্কিও ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তিনি। একইসঙ্গে জানান, রাশিয়ার সঙ্গে ইস্তাম্বুলে সরাসরি আলোচনায় তিনি যোগ দেবেন, যদি পুতিন উপস্থিত থাকেন।

পুতিন ও জেলেনস্কির ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর আর সামনাসামনি দেখা হয়নি। তবে জেলেনস্কি আশা করেছিলেন, পুতিনের সঙ্গে ফের মুখোমুখি দেখা হোক তার।

বুধবার রাতে এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া থেকে কে আসবে তা দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেব ইউক্রেন কোন পদক্ষেপ নেবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেক পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘হত্যাকাণ্ড দীর্ঘায়িত করার কোনও মানে হয় না। এবং আমি বৃহস্পতিবার তুর্কিয়েতে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করব। ব্যক্তিগতভাবে।’

তবে জেলেনস্কির সেই আশা পূরণ হলো না। যদিও ইউক্রেন জানিয়েছে, এরইমধ্যে তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।