সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাতকারীর ২৫ বছরের কারাদণ্ড

বিখ্যাত লেখক সালমান রুশদিকে প্রকাশ্য মঞ্চে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে এক চোখ চিরতরে অন্ধ করে দেওয়া হামলাকারী হাদি মাতারকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালতে রায় শোনার সময় রুশদিকে ‘অভদ্র ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী’ বলে উল্লেখ করেন এবং তাকে ‘ভণ্ড’ আখ্যা দেন হাদি মাতার। খবর আল জাজিরার।

হাদি মাতার ও সালমান রুশদি

২৭ বছর বয়সী হাদি মাতারকে হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেক ব্যক্তিকে আহত করার জন্য হাদি মাতারকে আরও ৭ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে, যা একযোগে চলবে।

রায় ঘোষণার আগে আদালতে দেওয়া বক্তব্যে হাদি মাতার রুশদির বাকস্বাধীনতা বিষয়ক মতাদর্শকে ‘ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘সালমান রুশদি অন্যদের অসম্মান করতে চান। তিনি একজন ঠগ, যিনি অন্যদের হয়রানি করতে চান। আমি তা মেনে নিতে পারি না।’ রায় ঘোষণার সময় রুশদি আদালতে উপস্থিত না থাকলেও একটি বিবৃতি জমা দেন।

সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে, নিউইয়র্কের চটুকুয়া ইনস্টিটিউশনে একটি লেখক সম্মেলনে। তখন মাস্ক পরা হাদি মাতার মঞ্চে উঠে রুশদিকে মাথা ও শরীরে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করেন। এই হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন এবং তার এক চোখের দৃষ্টি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়।

ওই হামলার পর রুশদিকে ১৭ দিন পেনসিলভানিয়ার এক হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয় এবং এরপর তিন সপ্তাহ নিউইয়র্ক সিটিতে পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘নাইফ’ নামের স্মৃতিকথায় হামলার বর্ণনা দেন।

৭৭ বছর বয়সী রুশদি আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, ‘ওই মুহূর্তে তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে মারা যাচ্ছেন’। তিনি বলেন, ‘আমি কেবল রক্ত দেখছিলাম’।

চটুকুয়া কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জেসন শ্মিট বলেন, ‘এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তিনি (হাদি মাতার) শুধু রুশদির ওপর নয়, বরং পুরো কমিউনিটির ওপর আঘাত হানতে চেয়েছিলেন। সেই দিন ওই অনুষ্ঠানে ১৪০০ দর্শক উপস্থিত ছিলেন’।

অন্যদিকে, মাতারের আইনজীবী নাথানিয়েল ব্যারোন দাবি করেন, ‘তার মক্কেলের পূর্বে কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই এবং দর্শকদের ‘ভিকটিম’ হিসেবে বিবেচনা করাটা যুক্তিসংগত নয়’। তিনি সর্বোচ্চ ১২ বছরের সাজার আবেদন করেছিলেন।

তবে বিচারক হাদি মাতারকে ২৫ বছর কারাদণ্ডের সাজা দিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা বাকস্বাধীনতা ও শিল্পের প্রতি সরাসরি আঘাত’।

১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইয়ের জন্য তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন। এরপর থেকেই রুশদি প্রাণনাশের হুমকিতে ছিলেন।