‘মুসলিম বিশ্বের নিরবতা গাজাকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ আবদুল মালিক বদরুদ্দিন আল-হুথি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংসতায় মুসলিম দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও নীরবতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মুসলিম বিশ্বের এই উদাসীনতা ইসরায়েলকে আরও বর্বর ও বেপরোয়া অপরাধ সংঘটনে সাহস যোগাচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘর্ষের উসকানি দিচ্ছে।

ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়েদ আবদুল মালিক বদরুদ্দিন আল-হুথি

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সানায় এক টেলিভিশন ভাষণে সাইয়্যেদ আল-হুথি বলেন, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব এবং এই দায়িত্ব আল্লাহর দরবারে জবাবদিহির বিষয়।

তিনি বলেন, ‘এই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার পরিণতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে। মুসলিম দেশগুলোর পর্যাপ্ত জনশক্তি, অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও সামরিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসছে না। অথচ আমরা দেখছি, কিছু বিবেকবান ইহুদিও ইসরায়েলের এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।’

আল-হুথি একজন ইহুদির বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘এক ইহুদি ব্যক্তি পর্যন্ত বলেছেন, তিনি কখনো কল্পনাও করেননি যে গাজায় এক রাতে ১০০ মানুষ হত্যা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হবে। এটি মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম লজ্জার বিষয়। তার এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, শত কোটি মুসলমানের এই উম্মাহ আজ কতটা অসাড় ও অক্ষম।’

মুসলিম দেশগুলোর সেনাবাহিনী, সম্পদ ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বর্বরতা থামাতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়াকে তিনি ‘চরম ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘যতদিন মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেবল ফাঁকা বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, ততদিন ইসরায়েল তাদের গণহত্যা চালিয়েই যাবে।’

আরব ও মুসলিম দেশগুলোর বিবৃতিকে ‘শীতল ও নিষ্প্রাণ’ আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা শুধু অন্যদের ফিলিস্তিনের জন্য কিছু করতে বলে, কিন্তু নিজেরা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। বাস্তব কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ হবে না।’

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করে হুথি নেতা বলেন, ‘ইসরায়েলি নেতারাও এখন স্বীকার করছেন যে গাজায় যুদ্ধ করে তারা কিছুই অর্জন করতে পারছে না। কিন্তু এরপরও তারা গণহত্যা ও অবরোধ অব্যাহত রেখেছে।’

গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকটকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম বিশ্বের জন্য ‘বড় কলঙ্ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “যদি মুসলিম বিশ্বে সামান্যতম ঈমান ও মানবতা অবশিষ্ট থাকত, তাহলে গাজার নারী-শিশুদের আর্তনাদই কোটি কোটি মুসলিমকে জাগিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। নারীদের আহাজারি যদি মুসলমানদের হৃদয়ে নাড়া না দেয়, তবে বুঝতে হবে আমাদের মধ্যে আবেগ, মানবতা ও দায়িত্ববোধের মারাত্মক অভাব রয়েছে।”

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইয়েমেনের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের কথা উল্লেখ করে সাইয়্যেদ আল-হুথি বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে আমরা ইসরায়েলের দিকে আটটি হাইপারসনিক ও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছি এবং একাধিক ড্রোন হামলা চালিয়েছি। এর মধ্যে তিনটি মিসাইল তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল। আমাদের অভিযানের ফলে বহু আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন ইসরায়েলে তাদের ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলি শত্রুর বিরুদ্ধে ইয়েমেনি প্রতিরোধ অত্যন্ত ফলপ্রসূ হচ্ছে এবং শত্রু এই প্রতিরোধ নস্যাৎ করতে ব্যর্থ হয়েছে। হুদাইদার ইয়েমেনি বন্দরগুলোর ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২২টি বিমান হামলা চালিয়েও শত্রু ইয়েমেনি অভিযানে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি, বরং তারা আমাদের সংকল্পকে আরও দৃঢ় করেছে।’