আইসিসির চার বিচারপতির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, সার্বভৌমত্বে হুমকি দেখছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চারজন বিচারপতির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ও ভিত্তিহীন পদক্ষেপ’ গ্রহণ করার জেরেই এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খবর: আল জাজিরা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও আইসিসি

বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, ‘আইসিসি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর নাগরিকদের তদন্ত ও বিচার করার জন্য মনগড়া ক্ষমতার দাবি করে আসছে, যা আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সুস্পষ্ট হুমকি।’

ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া আইসিসির চার বিচারপতি হলেন: উগান্ডার সলোমি বালুঙ্গি বোসা, পেরুর লুজ দেল কারমেন ইবানেজ কারাঞ্জা, বেনিনের রেইন অ্যাডিলেড সোফি আলাপিনি গানসু এবং স্লোভেনিয়ার বেটি হোলার।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা উল্লেখিত বিচারকদের যাবতীয় সম্পদ জব্দ করা হবে। পাশাপাশি, কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন করতে পারবে না।

এদিকে, আইসিসি এক পাল্টা বিবৃতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ‘নিন্দনীয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা জানিয়েছে, ‘এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে খর্ব করার একটি অপচেষ্টা। এটি যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের নিরীহ মানুষদের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে।’

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুসারে, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দেওয়ার কারণে বিচারপতি বোসা ও কারাঞ্জাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আইসিসি আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তদন্তের অনুমতি দিলে যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র বিরোধিতা করে। প্রাথমিকভাবে আইসিসি সেই তদন্তের অনুমোদন না দিলেও, পরবর্তীতে একটি রায় সংশোধন করে মার্কিন সেনা ও সিআইএ সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত গোপন বন্দিশালায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তদন্ত চালানোর অনুমতি দেয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র রোম সংবিধির স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, আফগানিস্তান এই সংবিধির সদস্য হওয়ায় আইসিসি সেখানে তার বিচারিক এখতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে বলে আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছিল।

অন্যদিকে, বিচারপতি গানসু ও হোলারকে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে আইসিসির পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আইসিসি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

ট্রাম্প প্রশাসন জোর দিয়ে বলেছে, ‘আইসিসি প্রকৃতপক্ষে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা কেবল আইনি সংস্থার মুখোশ পরে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল উভয় দেশই যুদ্ধের আইন কঠোরভাবে মেনে চলে। আইসিসির এই ধরনের তদন্ত আমাদের সেনাসদস্যদের হয়রানি ও গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে ফেলছে।’

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল করার একটি ঘৃণ্য প্রচেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এর ফলে যুদ্ধাপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়বে।