ইরানে ইসরায়েলি হামলা: একতরফা পদক্ষেপে উদ্বেগ, উত্তেজনা কমানোর আহ্বান ন্যাটোর

ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর একযোগে কাজ করা ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাটো জোটের প্রধান।

মার্ক রুটে

শুক্রবার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর ‘দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির’ কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “এটি ইসরায়েলের একটি একতরফা পদক্ষেপ। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক মিত্র দেশের জন্য এই মুহূর্তে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি তারা সেই চেষ্টাই করছে।”

রুটে এই অঞ্চলের উত্তেজনা কমাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।

পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নাকচ করে তিনি বলেন, “না, আমরা তেমন কোনো পরিস্থিতির কাছাকাছি নেই।” তিনি আরও বলেন, ন্যাটো মিত্ররা ‘যত দ্রুত সম্ভব সংঘাত নিরসনের জন্য জোরালোভাবে কাজ করছে’।

ইসরায়েল-ইরান পাল্টাপাল্টি হামলা

ইরানের গণমাধ্যমের তথ্যমতে, স্থানীয় সময় ভোর ৩টার দিকে ইসরায়েলি হামলা শুরু হয় এবং এতে সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক এলাকাকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলায় মোট ২০০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ৩৩০টি গোলা নিক্ষেপ করা হয়।

এর জবাবে ইরান ইসরায়েলের দিকে ১০০টিরও বেশি ড্রোন নিক্ষেপ করে, যেগুলো প্রতিহত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন।

ডেফরিন হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিহত হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন চিফ অফ স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি এবং সিনিয়র কমান্ডার গোলাম আলী রশিদ।

উভয় দেশই একটি পূর্ণমাত্রার সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, ইরান ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ন্যাটোতে ব্যয় ৫ শতাংশে উন্নীত করবে সুইডেন

সংবাদ সম্মেলনে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন ঘোষণা করেন যে, তার দেশ ন্যাটো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করবে, যার মধ্যে অন্তত ৩.৫ শতাংশ মূল প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে। তিনি এই পদক্ষেপকে রাশিয়ার যেকোনো ভবিষ্যৎ আগ্রাসন মোকাবিলায় সুইডেনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক বিনিয়োগ’ বলে অভিহিত করেন।

প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে সংঘাতের আরও বিস্তার সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “এই অঞ্চলটি ইতোমধ্যেই নানা কারণে উত্তপ্ত, তাই এখানে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। এর ফলে বিশ্বজুড়ে সমস্যা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।”

তিনি ‘রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকারের’ প্রতি সুইডেনের দৃঢ় সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, ন্যাটোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চল এবং ইউক্রেন উভয়ই আরও সুরক্ষিত থাকবে।