গাজায় ত্রাণপ্রার্থীদের লাইনে ফের ইসরায়েলি হামলা, নিহত ২১

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আবারও মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত মানুষের ওপর রক্তক্ষয়ী হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মঙ্গলবার মধ্য গাজায় ত্রাণ বিতরণের একটি কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি ও গোলাবর্ষণ করা হলে অন্তত ২১ জন নিহত এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়েছেন।

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের আল-আওদা হাসপাতালে স্বজনের মরদেহের পাশে ফিলিস্তিনি তরুণদের আহাজারি। সালাহউদ্দিন সড়কে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত একটি খাদ্য সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ওই ব্যক্তি। ২৪ জুন, ২০২৫। ছবি: এএফপি

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে মধ্য গাজায় সহায়তার জন্য অপেক্ষারত বেসামরিক নাগরিকদের জমায়েতকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গুলি ও ট্যাংকের গোলা নিক্ষেপ করলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য জানতে এএফপির পক্ষ থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডটিতে ২০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের কারণে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি একমুঠো খাবারের আশায় বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে জড়ো হন। কিন্তু প্রায়শই এই অসহায় মানুষগুলো হামলার শিকার হচ্ছেন।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শনিবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ চাইতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫০ জন নিহত এবং প্রায় ৩,৫০০ জন আহত হয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই ‘গাজা মানবিক সহায়তা সংস্থা’ পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে ঘটেছে। তবে এই বেসরকারি সংস্থাটির কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশ্বের বড় বড় ত্রাণ গোষ্ঠীগুলো মনে করে, এই সংস্থাটি ইসরায়েলি সামরিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে, তাই তারা এর সাথে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এদিকে, গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা আরও জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে গাজা শহরে একটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আরও পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, “এখন গাজার পালা। সেখানেও এটি শেষ করার সময় এসেছে। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনুন, যুদ্ধ শেষ করুন।”

উল্লেখ্য, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষে সব এলাকায় অবাধে প্রবেশ করা এবং স্বাধীনভাবে হতাহতের সংখ্যা যাচাই করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।