মার্কিন দূত: একটি অন্তহীন যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছি, আলোচনা চলছে

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক উত্তেজনার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের সব লক্ষ্য অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। বুধবার তিনি আরও জানান, এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে একটি অন্তহীন যুদ্ধকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।

স্টিভ উইটকফ

সিএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা এবং ইসরায়েল—উভয়েই আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি। প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) ইসরায়েলি ও ইরানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং আমরা একটি যুদ্ধবিরতি পেয়েছি, যা এই বিষয়টিকে একটি অন্তহীন যুদ্ধে পরিণত হতে দেয়নি।’ তিনি যোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যা কিছু অর্জন করতে চেয়েছিল, তার সবই এখানে অর্জিত হয়েছে এবং এই সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই।

মার্কিন এই বিশেষ দূত জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি ‘সার্বিক শান্তি চুক্তির’ বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। একাধিক মধ্যস্থতাকারী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’

একইসঙ্গে আব্রাহাম চুক্তি সম্প্রসারণের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উইটকফ বলেন, ‘আমরা মনে করি, খুব শীঘ্রই বেশ কিছু বড় ঘোষণা আসবে, যেখানে নতুন দেশগুলো আব্রাহাম শান্তি চুক্তিতে যোগ দেবে।’

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে উইটকফ কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ হলো চূড়ান্ত সীমা। আর সমৃদ্ধিকরণের পর সেটিকে অস্ত্র বানানোর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াও চূড়ান্ত সীমা হিসেবে গণ্য হবে।’

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে—গণমাধ্যমের এমন দাবি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিআইএ ঠিক এর বিপরীতটাই মনে করে। আমরা হস্তক্ষেপ করার আগেই ইসরায়েলিরা ব্যাপক ক্ষতি করেছে এবং আমাদের হস্তক্ষেপে তাদের অস্ত্র তৈরি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা নির্মূল করার বিষয়টি আরও নিশ্চিত হয়েছে।’ তিনি নাটানজ, ফোরদো এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এগুলো নির্মূল করা হয়েছে এবং সমৃদ্ধকরণের বেশিরভাগ সম্ভাবনাও শেষ করে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, এখন শান্তি আলোচনার মূল বিষয় হলো—‘কীভাবে ইরানের জন্য একটি উন্নত বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি পুনর্গঠন করা যায়, যা সমৃদ্ধকরণযোগ্য হবে না?’

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা শুরু করে, যা ১২ দিন স্থায়ী হয়। এই সময়ে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পাশাপাশি দেশটির সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়। এই হামলায় ইরানে অন্তত ৬০৬ জন নিহত এবং ৫,৩৩২ জন আহত হন। এর জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) দিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অনুসারে, এতে অন্তত ২৮ জন নিহত ও ৩,২৩৮ জন আহত হন।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় এবং তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘শেষ করে দেওয়া হয়েছে’ বলে দাবি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় তেহরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল উবেইদ বিমান ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালায়। অবশেষে গত ২৪ জুন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়।