গাজায় শান্তির নতুন আশা: জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব!

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে নতুন একটি চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে মিশর। রোববার সন্ধ্যায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেল আত্তি জানিয়েছেন, এই প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে, যার বিনিময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং উপত্যকায় জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করা হবে।

বদর আবদেল আত্তি

স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি টেকসই সমাধান এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছি।’

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই প্রস্তাবটি মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি যৌথ প্রচেষ্টা। তিনি এটিকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের পথে ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যে প্রস্তাবটি আলোচনাধীন রয়েছে, তাতে কিছু সংখ্যক ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং চিকিৎসা সামগ্রীসহ গাজায় দ্রুত ত্রাণ পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।’

এই শীর্ষ কূটনীতিক মনে করেন, এই পদক্ষেপটি একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হওয়ার গতি সঞ্চার করবে, যা শেষ পর্যন্ত গত ১৯ জানুয়ারির চুক্তি বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাবে।

বদর আবদেল আত্তি জোর দিয়ে বলেন, প্রস্তাবিত এই চুক্তিটি ‘কেবলমাত্র একটি প্রথম ধাপ’। এর পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ীভাবে সামরিক তৎপরতা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, ‘যেকোনো আসন্ন চুক্তিতে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য নিশ্চয়তা অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্র অনুধাবন করে এবং এ বিষয়ে তাদের একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন পুনরায় শুরু হলে তা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি সৃষ্টি করবে।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে তিন ধাপের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল পুনরায় উপত্যকায় আক্রমণ শুরু করলে সেই চুক্তিটি ভেস্তে যায়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় এক নৃশংস অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি হয়েছে।