ব্রিকস: ট্রাম্পের ‘খামখেয়ালি’ শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ‘খামখেয়ালিপূর্ণ’ আমদানি শুল্ক বিশ্ব অর্থনীতিকে ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে উদীয়মান অর্থনীতির জোট ব্রিকস। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত জোটের শীর্ষ সম্মেলনে এই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ছবি - সংগৃহীত

ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ব্রিকসের ১১টি সদস্য রাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উৎপাদনে এদের সম্মিলিত অংশীদারিত্ব ৪০ শতাংশ। বিভিন্ন বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধ নীতির বিষয়ে তারা একসুরে কথা বলেছে।

সম্মেলনের একটি খসড়া বিবৃতি থেকে জানা গেছে, ব্রিকস নেতারা ‘একতরফা শুল্ক ও অশুল্ক পদক্ষেপ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করতে চলেছেন। বিবৃতিতে এই ধরনের পদক্ষেপকে অবৈধ ও খামখেয়ালিপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের এক বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে মার্কিন মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) দুই শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে মেক্সিকো থেকে শুরু করে তেলসমৃদ্ধ আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

দুই দশক আগে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি মঞ্চ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিকস পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে চীনের নেতৃত্বাধীন একটি পাল্টা শক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর গাজা যুদ্ধ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কারের মতো বিভিন্ন বিষয়ে অর্থবহ মতৈক্যে পৌঁছাতে জোটটি বেশ বেগ পাচ্ছে।

এবারের সম্মেলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকটাই ম্লান হয়েছে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতির কারণে। গত ১২ বছরে এই প্রথম তিনি ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দেননি। অনুপস্থিতির তালিকায় আরও রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যদিও তিনি ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। পুতিন তার বক্তব্যে বলেন, ব্রিকসের প্রভাব ‘ক্রমাগত বাড়ছে’ এবং এই জোট বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে।

তা সত্ত্বেও, শি জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি ব্রিকস এবং আয়োজক দেশ ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যিনি বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিলের জোরালো ভূমিকা দেখতে চান। রোববার রিওতে নেতাদের স্বাগত জানিয়ে লুলা বলেন, “বহুপাক্ষিকতা আজ আক্রমণের শিকার।” তিনি ন্যাটো এবং ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করেন।

লুলা অভিযোগ করেন, ন্যাটোর সদস্যরা জিডিপির পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের অঙ্গীকার করে আন্তর্জাতিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উস্কে দিচ্ছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধের চেয়ে শান্তিতে বিনিয়োগ করা সব সময়ই কঠিন।” একই সঙ্গে তিনি গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বলেও অভিযুক্ত করেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তার প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সম্মেলন সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ইরান তাদের সামরিক, পারমাণবিক ও অন্যান্য স্থাপনায় সাম্প্রতিক মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলার কঠোর নিন্দা জানানোর দাবি তুলেছিল।

তবে অন্য একটি কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চূড়ান্ত বিবৃতিতে গত মাসের মতোই সংযত বার্তা থাকবে, যেখানে ইরানের ওপর হামলার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হলেও ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হবে না।