যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম পরীক্ষায় বসল গাজার শিক্ষার্থীরা

গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসল শিক্ষার্থীরা। শনিবার গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনলাইন পরীক্ষায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এদের অনেকেই যুদ্ধের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পারেনি।

চলমান এই যুদ্ধে গাজার শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার প্রায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষা অবকাঠামোই ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই যুদ্ধের কারণে ছয় লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। সংস্থাটি পরিচালিত অনেক স্কুল এখন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্র, যেগুলো প্রায়ই ইসরায়েলি হামলার শিকার হচ্ছে। এমন ভয়াবহতার মধ্যেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে গাজার শিক্ষার্থীরা।

গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একটি বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। কেউ বাড়ি থেকে, আবার কেউ নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন।

গাজার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা পরিচালক মোরাদ আগা জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থীরা একটি বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছে। তবে তাদের দুর্বল ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবের মতো নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’

দোয়া খাতাব নামের এক পরীক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা অনলাইনে পরীক্ষা দিচ্ছি, কিন্তু এটা খুবই কঠিন। অনেকের কাছে কোনো ডিভাইস নেই, ইন্টারনেট নেই, এমনকি থাকার মতো নিরাপদ জায়গাও নেই। আমাদের বইগুলো পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে গেছে।’

যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একটি বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই কঠিন সময়েও কিছু শিক্ষক ধ্বংস হয়ে যাওয়া শ্রেণিকক্ষ পুনরায় চালু করে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষক ইনাম আবু স্লিসা বলেন, ‘এই প্রথম অনলাইনে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা কিছুটা দ্বিধায় ভুগছে। তবে আমরা তাদের ধাপে ধাপে সবকিছু বুঝিয়ে দিচ্ছি।’

আল-জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম ডেইর আল-বালাহ থেকে জানান, যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও গাজার শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ নেই, বই নেই, ইন্টারনেট সংযোগও প্রায় বিচ্ছিন্ন, তবুও তারা পরীক্ষায় বসেছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই পরীক্ষা গাজার শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু একটি পরীক্ষা নয়, এটি তাদের জীবনে আশার আলো জ্বালিয়ে রাখার সংগ্রাম। বোমার শব্দের মাঝেই তারা ল্যাপটপে লগইন করে পরীক্ষা দিচ্ছে, কারণ তারা জানে—শিক্ষাই তাদের ভবিষ্যতের পথ দেখাবে।’

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ‘পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস’ করেছে, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।