জাতিসংঘ: ত্রাণ নিতে গিয়ে ৩০ জুন থেকে গাজায় ২৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত

জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, গত ৩০ জুন থেকে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলের হাতে ২৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক ভাষণে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি বলেন, ‘গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে যখন নিবিড় আলোচনা চলছে, তখন আমি আপনাদের সামনে পরিস্থিতি তুলে ধরছি’।

তিনি বলেন, গাজার পরিস্থিতি ‘ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। পুরো উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক অভিযান ও সংঘাত বাড়ছে এবং প্রতি ঘণ্টায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ঐতিহাসিক এই দুঃস্বপ্নের অবশ্যই অবিলম্বে অবসান হতে হবে’।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে খিয়ারি জানান, গত ৩০ জুন তার সর্বশেষ ব্রিফিংয়ের পর থেকে কমপক্ষে ১,৮৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এর মধ্যে ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন ‘সামরিকীকরণ করা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশেপাশে সহ বিভিন্ন স্থানে সহায়তা সংগ্রহ করার সময়’।

খিয়ারি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার, উপত্যকায় পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের রাজনৈতিক পথে ফেরার প্রেক্ষাপটে পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন শুরু করার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে’।

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের বারবার দেওয়া উচ্ছেদ আদেশের কারণে ‘জনগণের বারবার স্থানচ্যুতি ঘটছে’। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের যেকোনো অংশ থেকে জনগণকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে’।

খিয়ারি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সব পক্ষকে অবশ্যই সর্বদা সম্মান করতে হবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে’।

তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিস্থিতিকে ‘গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেন, যেখানে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা এবং ইসরায়েলি সামরিক অভিযান তীব্রতর হয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ২৭০ কোটি ডলারের কর রাজস্ব আটকে রাখা বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান, যা তাদের অপরিহার্য পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সতর্কবার্তার পুনরাবৃত্তি করে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) ‘বিকল্পহীন’। তিনি আরও জানান, সংস্থাটি আগস্ট মাসের পর থেকে তীব্র তহবিল সংকটের মুখোমুখি হবে।

তিনি বলেন, ‘সংকট সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্ত এবং দখলের অবসান ছাড়া এই সংকটের কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না’। তিনি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান নিয়ে আসন্ন এক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠককে স্বাগত জানান।

সিরিয়ার বিষয়ে খিয়ারি বলেন, দেশটি সহিংসতার এক নতুন ঢেউ প্রত্যক্ষ করছে, যা শান্তির ভঙ্গুর পথকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে জানান, সুওয়াইদার সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ‘দ্রুজ ও বেদুইন বেসামরিক নাগরিকসহ শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে’। তিনি পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।