গাজায় হামলা জোরদার নাকি যুদ্ধবিরতি, চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ইসরায়েল

গাজা উপত্যকায় প্রায় ২২ মাস ধরে চলা যুদ্ধের সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধবিরতি আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। তবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে ইসরায়েলি শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র বিভক্তি দেখা দিয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে এক জটিল পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশন জানিয়েছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে গাজায় হামলা আরও তীব্র করার বিষয়টি আলোচনা হবে, এমনকি যদি এতে উপত্যকায় আটক থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখেও পড়ে। এই পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের নেতৃত্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

হামলা জোরদার করার পক্ষে রয়েছেন কৌশলগত বিষয়াবলি মন্ত্রী রন ডারমার, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল রোমান গফম্যান এবং মন্ত্রিসভা সচিব ইয়োসি ফুকস।

অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময়ের মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান আইয়াল জামির, পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার, সম্প্রতি সরকার থেকে পদত্যাগকারী শাস পার্টির নেতা আরিয়েহ দেরি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ডেভিড বার্নিয়া, জিম্মি বিষয়ক সামরিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিৎজান আলোন এবং শিন বেত-এর আলোচক দলের সদস্যরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ হামলা তীব্রতর করা বা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম আরও জানায়, সেনাপ্রধান আইয়াল জামির তার ঘনিষ্ঠ মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, হামলা সম্প্রসারণ করা হলে জিম্মিদের জীবন বিপন্ন হতে পারে এবং সুস্পষ্ট রাজনৈতিক নির্দেশনা ছাড়া তিনি এমন কোনো পদক্ষেপে অনুমোদন দেবেন না।

এদিকে, হারেৎজ পত্রিকা জানিয়েছে, গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে উপত্যকাটি ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাপ্রধান জামির একটি ‘পর্যায়ক্রমিক হামলা পরিকল্পনা’ অনুমোদন করতে পারেন। নতুন এই পরিকল্পনার আওতায়, একাধিকবার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন ‘সংবেদনশীল এলাকা’য় স্থল অভিযান চালানো হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এতদিন জিম্মিদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এসব এলাকায় স্থল অভিযান এড়িয়ে চলছিল, তবে নতুন পরিকল্পনাটি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা হারেৎজকে জানিয়েছেন, ‘এই ধারণা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে যে হামাস চুক্তিতে আগ্রহী নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ কারণে প্রধানমন্ত্রী সামরিক উপায়ে জিম্মিদের মুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি যুদ্ধাঞ্চলের বাইরের এলাকাগুলোতে এবং যতটা সম্ভব হামাসের নিয়ন্ত্রণমুক্ত অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় এক নৃশংস অভিযান চালিয়ে আসছে, যেখানে ৬০,৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলারও সম্মুখীন।