মাইক্রোসফটকে টেক্কা দিতে ইলন মাস্কের ‘ম্যাক্রোহার্ড’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-চালিত সফটওয়্যার কোম্পানি ‘ম্যাক্রোহার্ড’-এর ঘোষণা দিয়ে প্রযুক্তি দুনিয়ায় ফের আলোড়ন তুলেছেন ইলন মাস্ক। তার এক্সএআই উদ্যোগের অধীনে গড়ে ওঠা এ নতুন প্রতিষ্ঠানকে তিনি একটি ‘পুরোপুরি এআই-চালিত সফটওয়্যার কোম্পানি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। নামটি শুনতে কিছুটা কৌতুকপূর্ণ মনে হলেও মাস্ক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পটি বাস্তব এবং এর লক্ষ্য অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

‘ম্যাক্রোহার্ড’ নামটি যে কেবলই শব্দের খেলা নয়, তা মাস্কের পরিকল্পনায় স্পষ্ট। তিনি ‘মাইক্রো’র বদলে ‘ম্যাক্রো’ এবং ‘সফট’র জায়গায় ‘হার্ড’ শব্দ ব্যবহার করে মূলত মাইক্রোসফটের বাজার ও প্রভাবকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। মাস্কের মতে, মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান যেহেতু নিজেরা কোনো ভৌত যন্ত্রপাতি তৈরি করে না, সেহেতু তাদের সফটওয়্যার কোম্পানির কার্যক্রম পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব।

ম্যাক্রোহার্ড মূলত একটি মাল্টি-এজেন্ট এআই কোম্পানি, যেখানে কয়েকশ বিশেষায়িত এআই এজেন্ট একসঙ্গে কাজ করবে। কোডিং, ছবি ও ভিডিও তৈরি, ভাষা বিশ্লেষণ এবং ভার্চুয়াল মিথস্ক্রিয়া—সবকিছুই পরিচালিত হবে স্বয়ংক্রিয় এজেন্টদের মাধ্যমে, যারা মানুষের মতোই আচরণ করতে সক্ষম হবে। মাস্ক জানিয়েছেন, এই এজেন্টরা ভার্চুয়াল পরিবেশে সফটওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন ফলাফল তৈরি করবে, যা মানুষের দক্ষতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ প্রকল্পের পেছনে শক্তি জোগাচ্ছে এক্সএআই’র মেমফিসে অবস্থিত ‘কোলোসাস ২’ নামের সুপারকম্পিউটার, যা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এআই কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। লাখ লাখ এনভিডিয়া জিপিইউ চালিত এই ব্যবস্থা ম্যাক্রোহার্ডকে এমন প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দেবে, যা তাকে ওপেনএআই বা মেটার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমকক্ষ বা তার চেয়েও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।

ম্যাসাচুসেটসের পেটেন্ট ও ট্রেডমার্ক দপ্তরে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী, এক্সএআই ইতোমধ্যে ‘ম্যাক্রোহার্ড’ নামে একটি ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করেছে। এই কোম্পানি থেকে কথ্য ভাষাকে লেখায় রূপান্তর করার সফটওয়্যার, কথোপকথনে সক্ষম চ্যাটবট এবং এআই প্রযুক্তিতে পরিচালিত নানা ধরনের ডাউনলোডযোগ্য সফটওয়্যার বাজারে আনা হবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে ইলন মাস্ক যে সরাসরি মাইক্রোসফটের বাজারে প্রবেশ করতে চাইছেন, তা নিয়ে প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মধ্যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। মাইক্রোসফট বছরের পর বছর ধরে করপোরেট জগতে সফটওয়্যারের বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। ম্যাক্রোহার্ড কি সেই আধিপত্য ভাঙতে পারবে—এখন সেটিই বড় প্রশ্ন।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। বর্তমান এআই প্রযুক্তি অনেক উন্নত হলেও সফটওয়্যার উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে এখনো মানুষের তত্ত্বাবধান প্রয়োজন। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা তৈরির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা এবং গুণগত মান নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ইলন মাস্ক অতীতে টেসলা, স্পেসএক্স ও স্টারলিঙ্কের মতো প্রকল্পে যেভাবে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন, তাতে ম্যাক্রোহার্ডকেও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

ইলন মাস্ক নিজেও স্বীকার করেছেন যে, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। তবে তিনি দাবি করেন, সফল হলে এই কোম্পানি ভবিষ্যতের সফটওয়্যার উন্নয়নের নতুন মানদণ্ড তৈরি করবে এবং সফটওয়্যার তৈরির প্রক্রিয়াকে আমূল বদলে দেবে।