ইসরায়েলি অভিযানের মুখেও গাজা ছাড়বে না গির্জা কমিটি

ইসরায়েলি দখল অভিযানের প্রস্তুতির মুখেও গাজা শহর ছাড়বে না বলে জানিয়েছে হলি ফ্যামিলি গির্জার জরুরি কমিটি। গির্জায় আশ্রয় নেওয়া যাজক, সন্ন্যাসিনী এবং সাধারণ বেসামরিকদের সেবায় তারা সেখানেই থাকবেন। বুধবার এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

কমিটির এই সিদ্ধান্তটি জেরুজালেমের ল্যাটিন এবং গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেটসের একটি যৌথ ঘোষণার পর নেওয়া হয়েছে। ওই ঘোষণায় গাজা শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর আসন্ন আগ্রাসন ও চলমান স্থানচ্যুতি আদেশের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।

হলি ফ্যামিলি গির্জার বিবৃতিতে জানানো হয়, যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই কমিটি গির্জার ভেতরে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং বাইরের সম্প্রদায়ের সেবায় অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তারা গির্জার পাশে দাঁড়ানোর এবং সম্প্রদায়ের বৃহত্তর কল্যাণে যাজক ও সন্ন্যাসিনীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।

জেরুজালেম থেকে মঙ্গলবার প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে প্যাট্রিয়ার্কেটস কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ‘কয়েক সপ্তাহ আগে’ গাজা শহর নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি ও আসন্ন আগ্রাসনের’ খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজা শহরের বেশ কয়েকটি এলাকার জন্য ইতোমধ্যে স্থানচ্যুতির আদেশ জারি করা হয়েছে। ক্রমাগত ভারী বোমাবর্ষণের খবর আসছে। এই অভিযানের আগে থেকেই সেখানকার পরিস্থিতি নাটকীয় ছিল, এখন আরও বেশি ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যু ঘটছে।’

বিবৃতি অনুসারে, গাজা শহরে এখনও কয়েক লক্ষ বেসামরিক মানুষ রয়ে গেছে, যাদের মধ্যে সেন্ট পোরফিরিয়াস এবং হলি ফ্যামিলির গির্জায় আশ্রয় নেওয়া খ্রিস্টানরাও রয়েছেন। প্যাট্রিয়ার্কেটস কর্তৃপক্ষ জানায়, গির্জার ভেতরে থাকা অনেকেই ‘গত কয়েক মাসের কষ্টে দুর্বল ও অপুষ্টিতে ভুগছেন’ এবং তাদের জন্য দক্ষিণে পালিয়ে যাওয়া ‘মৃত্যুর পরোয়ানা ছাড়া আর কিছুই হবে না’।

হলি ফ্যামিলি কমিটি জোর দিয়ে বলেছে, তাদের এই ঘোষণা সম্পূর্ণ নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে তারা প্যাট্রিয়ার্কেটসের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে জানায়, গাজার অন্যান্য বাসিন্দাদের মতো গির্জায় আশ্রয় নেওয়াদেরও ‘বিবেক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী করবে’।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলি সরকার গাজার বাকি অংশ দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এর অংশ হিসেবে গাজা শহর থেকে প্রায় ১০ লক্ষ বাসিন্দাকে সরিয়ে দিয়ে শহরটি ঘিরে ফেলা হবে এবং বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য পাঠানো হবে। এরপর মধ্য গাজার শরণার্থী শিবিরগুলোর দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলায় প্রায় ৬৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই সামরিক অভিযানে পুরো উপত্যকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেখানে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া, উপত্যকায় চালানো নৃশংসতার জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি হয়েছে।