পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে নতুন উত্তেজনা, মুখোমুখি রাশিয়া ও ইউরোপ

ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছে রাশিয়া। সম্প্রতি ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য ‘স্ন্যাপব্যাক’ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দেওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানাল মস্কো।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত দূত দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি এই অভিযোগ করেন। তিনি জানান, প্রায় এক ঘণ্টা আগে রাশিয়া ও চীন নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এই প্রস্তাবে যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) বা পারমাণবিক চুক্তির একটি ধারার মেয়াদ ২০২৬ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় মাস বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

‘স্ন্যাপব্যাক’ পদ্ধতি চালু করার জন্য ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সমালোচনা করে পোলিয়ানস্কি বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর এই পদক্ষেপের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। কারণ তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবটি সততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছিল না। তারা এই নথির প্রতিটি দিক এবং এর মূল উদ্দেশ্যের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে জেসিপিওএ লঙ্ঘন করছে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা মনে করি না যে এই তিনটি দেশের এমন পদক্ষেপের কারণে পরিষদের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটি আমাদের অত্যন্ত দৃঢ় এবং নীতিগত বিশ্বাস।’ এসময় তিনি ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলার বিষয়টিও তুলে ধরেন এবং দেশগুলোকে সমস্যার মূল উৎস নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।

পোলিয়ানস্কি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়া-চীনের বিকল্প খসড়াটি কূটনীতি ও শান্তির পথ দেখায়। তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়া শান্তি ও কূটনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও চীন এখন পুরো বিশ্বের জন্য যে বিকল্পটি দিচ্ছে, তা আমাদের কোনো বাড়তি সমস্যা ছাড়াই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।’

পশ্চিমা দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিকে দমনমূলক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ভুল করবেন না, আমাদের পদক্ষেপ স্ন্যাপব্যাকের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ তিনি ই৩ দেশগুলোর (ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানি) বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা কেবল স্বাধীন দেশগুলোকে ‘ব্ল্যাকমেইল, হুমকি এবং দমন’ করার বিষয়েই যত্নশীল।

ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতাম যে আমরা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা কোনো ধরনের গ্যাংস্টারদের সঙ্গে কাজ করছি।’

বৃহস্পতিবার ই৩ দেশগুলো নিরাপত্তা পরিষদকে জানায় যে ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির শর্ত ‘উল্লেখযোগ্যভাবে লঙ্ঘন’ করেছে। এর ফলে পূর্বে বাতিল হওয়া জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের জন্য ৩০ দিনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের বিভিন্ন স্থাপনা ও উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ২০১৮ সালে এই পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইরানের ওপর নিজেদের নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করে। এই বছরের শুরুতে ইরানের সঙ্গে পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনায় প্রবেশ করলেও, জুন মাসে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে ওমানে অনুষ্ঠিতব্য ষষ্ঠ দফার আলোচনা বাতিল হয়ে যায়। ১২ দিনের ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলে আসছে যে ইরানকে অবশ্যই তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করতে হবে, তবে তেহরান যুক্তি দেয় যে তাদের কর্মসূচি শুধুমাত্র বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।