ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক অবৈধ ঘোষণা আদালতের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বেশিরভাগ বৈশ্বিক শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে একটি ফেডারেল আপিল আদালত। এই রায়কে তার আক্রমণাত্মক বাণিজ্য নীতির ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট কোর্ট ৭-৪ ভোটে এই রায় দেয়। আদালত জানিয়েছে, ট্রাম্প যে আইন ব্যবহার করে বেশিরভাগ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, সেই আইন তাকে এ ক্ষমতা দেয় না। সংবিধান অনুযায়ী, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা একচেটিয়াভাবে কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত।

তবে আপিল আদালত রায় কার্যকর হওয়ার বিষয়টি আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সুযোগ পায়।

এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার আপিল আদালতকে ‘চরম পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্ট তার পক্ষেই রায় দেবে। তার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যদি এই শুল্কগুলো কখনো বাতিল হয়, তবে এটি দেশের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। যদি এই রায় বহাল থাকে, তাহলে এটি যুক্তরাষ্ট্রকে আসলেই ধ্বংস করে দেবে।’

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের শুল্ক এখনো কার্যকর আছে এবং তারা এ বিষয়ে চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষায় আছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘ভি.ও.এস. সিলেকশনস বনাম ট্রাম্প’ নামে পরিচিত এই গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এটি ট্রাম্পের জন্য দ্বিতীয় পরাজয়। মামলাটি দুটি পৃথক আবেদন থেকে একত্রিত করা হয়েছে, যার একটি বারোটি রাজ্য এবং অন্যটি পাঁচটি ছোট মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে ট্রাম্পের বিস্তৃত শুল্কারোপের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েকটি ফেডারেল মামলার মধ্যে এটি সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের আইনজীবী জেফরি শোয়াব বলেন, ‘এই মামলায় দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ফেডারেল আদালত প্রেসিডেন্টের শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করল। এই সিদ্ধান্ত আমেরিকান ব্যবসা ও গ্রাহকদের অবৈধ শুল্কের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।’

আইনজীবী নিল কাত্যাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকের সিদ্ধান্ত আমাদের জাতির প্রতিষ্ঠাতাদের মূল সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির একটি শক্তিশালী পুনর্ব্যক্তিকরণ, বিশেষ করে এই নীতি যে, প্রেসিডেন্টকে আইনের শাসনের মধ্যেই কাজ করতে হবে।’

ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে আসছে, আইইইপিএ আইন জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রেসিডেন্টকে যেকোনো মাত্রায় দেশভিত্তিক শুল্কারোপের ক্ষমতা দেয়। তবে গত মে মাসের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের আইইইপিএ-ভিত্তিক শুল্ক বাতিল করেছিলেন।

শুক্রবারের রায়ে আদালত বলেছেন, আইইইপিএ-এর অধীনে ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কগুলো অতিরিক্ত ছিল। এই শুল্কের প্রভাব ব্যাপক, পরিমাণে অতিরিক্ত এবং এর মেয়াদ সীমাহীন। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব পণ্যের ওপর আরোপিত এবং প্রায় সব দেশকে প্রভাবিত করে।

তবে চারজন ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক বলেছেন, তারা শুল্কারোপের বৈধতার প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন, কারণ মামলার বাদীরা তাদের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ করতে পারেনি।