উত্তর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল, মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ইসরায়েল উত্তর গাজার কয়েকটি এলাকায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ বা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাজা শহরকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণার একদিন পর, শনিবার একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এই পদক্ষেপের ফলে অঞ্চলটিতে চলমান মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইসরায়েলি কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, গাজা শহরে অবস্থানরত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় কয়েক দিনের মধ্যেই ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমানো হবে এবং আকাশ থেকে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলিয়ারিচ সতর্ক করে বলেছেন, ‘গাজা শহর থেকে এত বড় জনসংখ্যা সরিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই নিরাপদ বা মানবিকভাবে করা সম্ভব নয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘খাদ্য, পানি, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের ভয়াবহ ঘাটতির মধ্যে কোনো এলাকা এত মানুষের চাপ সামলাতে পারবে না। এই পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

ইসরায়েল সরকারের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন প্রায় ২৩ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও সমালোচনা বাড়ছে। শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণ সরবরাহের জন্য ঘোষিত দিবাভাগের যুদ্ধবিরতি বাতিল করে। তাদের দাবি, গাজা শহর হামাসের একটি শক্ত ঘাঁটি এবং সেখানে এখনো সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক সক্রিয় রয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরবরাহকৃত ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

গাজা শহর থেকে পালিয়ে আসা ফাদি আল-দাউর নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি, কারণ এলাকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কেউ কোনো খোঁজ করছে না, সাংবাদিকরাও নেই। সেখানে কোনো কিছুই নেই।’

এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার জানিয়েছে, গাজা থেকে উদ্ধার হওয়া আরও একজন জিম্মির মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম ইদান শতিভি। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল থেকে অপহৃত হয়েছিলেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি আটক রয়েছেন, যাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করছে ইসরায়েল।

সামরিক অভিযান জোরদার করায় জীবিত জিম্মিদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে বলে আশঙ্কা করছে তাদের পরিবার। শনিবার তেল আবিবে হাজার হাজার মানুষ আবারও বিক্ষোভে নামেন এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানান। বিক্ষোভকালে ইদান শতিভির এক আত্মীয় সাহার মোর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যদি আরেকজন জীবিত জিম্মি মৃতদেহ হয়ে ফিরে আসে, তাহলে কেবল জিম্মি ও তাদের পরিবারকেই এর মূল্য দিতে হবে না। আপনাকেও ইচ্ছাকৃত হত্যার দায় বহন করতে হবে।’