'রাশিয়া ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে', ন্যাটোপ্রধানের হুঁশিয়ারি

রাশিয়ার ব্যাপক সামরিক সমাবেশের বিষয়ে সতর্ক করেছেন ন্যাটো মহাসচিব। তিনি বলেছেন, এই আয়োজন মস্কোয় কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং ইউক্রেন বা অন্য কোথাও ব্যবহারের জন্য। মঙ্গলবার লুক্সেমবার্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী লুক ফ্রিডেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউরিকো বাকেসের সঙ্গে আয়োজিত ওই সম্মেলনে ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে বলেন, ‘রুশ হুমকি প্রতিদিন বাড়ছে। এই বিষয়ে আমাদের সরল হলে চলবে না।’

রুটে আরও বলেন, জোটের অনেক সদস্য দেশ হয়তো নিজেদের দূরত্বের কারণে নিরাপদ ভাবছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, রাশিয়ার অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির কারণে এখন সব মিত্র দেশই খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে থাকা লিথুয়ানিয়ার সঙ্গে লুক্সেমবার্গ, দ্য হেগ বা মাদ্রিদের পার্থক্য এখন মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিটের। ইউরোপের এই অংশগুলোতে একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছাতে ঠিক এটুকুই সময় লাগবে।’

রুটে যোগ করেন, ‘তাই আমরা সবাই এখন রাশিয়ার সরাসরি হুমকির মুখে। আমরা সবাই এখন পূর্বাঞ্চলে রয়েছি। আপনি লন্ডনে থাকুন বা তালিনে, তাতে আর কোনো পার্থক্য নেই।’

ন্যাটো প্রধান প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী রাখার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, জোটের পুরো এলাকা জুড়ে আরও বেশি সক্ষমতা এবং বৃহত্তর সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে রুশ সশস্ত্র বাহিনী এবং সামরিক শক্তির ব্যাপক সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। এটি শুধু মস্কোয় কুচকাওয়াজ আয়োজনের জন্য নয়, এটি ব্যবহারের জন্য। যেমনটা আমরা ইউক্রেনে দেখতে পাচ্ছি এবং তারা হয়তো অন্য কোথাও এটি ব্যবহার করতে পারে।’

ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ন্যাটোর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় লুক্সেমবার্গকে ধন্যবাদ জানান ন্যাটো প্রধান। ন্যাটোর নতুন ‘প্রায়োরিটাইজড ইউক্রেন রিকয়ারমেন্টস লিস্ট (পিইউআরএল)’ উদ্যোগের অধীনে, মিত্র দেশগুলো থেকে তহবিল সংগ্রহ করে ইউক্রেনকে সরাসরি মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি যোগ করেন, ‘আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে ইউক্রেনে ২০০ কোটি ডলারের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণঘাতী এবং আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।’

হাইব্রিড ও সাইবার হুমকি মোকাবিলায় ন্যাটো

বুলগেরিয়ায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েনকে বহনকারী একটি উড়োজাহাজের জিপিএস জ্যামিংয়ের ঘটনা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রুটে বলেন, ন্যাটো বিষয়টি ‘অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে’ দেখছে এবং হাইব্রিড ও সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জোরদার করছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সবসময় ‘হাইব্রিড’ শব্দটি অপছন্দ করতাম, কারণ এটি শুনতে বেশ আদুরে মনে হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে জ্যামিং করে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করা বা ন্যাটোর কোনো মিত্র দেশে একজন বড় শিল্পপতিকে হত্যার চেষ্টা—এগুলোই হাইব্রিড হুমকি। সুতরাং, এগুলো কোনো আদুরে ছোট ঘটনা নয়।’

উল্লেখ্য, রোববার বুলগেরিয়া সফরের সময় উরসুলা ফন ডার লায়েনের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটে। তবে সোমবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই ঘটনায় রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।