বিক্ষোভ দমনে সেনা ব্যবহার: ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা

লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক। মঙ্গলবার জেলা আদালতের বিচারক চার্লস ব্রেয়ার এই রায় দেন। একইসঙ্গে তিনি পুলিশি কার্যক্রমে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের কোনো আদেশ দেননি।

বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘পোসে কমিটাটাস আইন’ নামে পরিচিত একটি পুরোনো আইন লঙ্ঘন করেছেন। ১৮৭৮ সালের এই আইনটি সাধারণত বেসামরিক আইন প্রয়োগের কাজে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

বিচারক ব্রেয়ার সামরিক বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দেওয়া যুক্তি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন লস অ্যাঞ্জেলেসে কোনো বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেনি এবং সেখানকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অক্ষম ছিল না।

বিচারক ব্রেয়ার তার রায়ে লিখেছেন, ‘বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র সেনা (যাদের পরিচয় প্রায়শই সুরক্ষামূলক বর্মে ঢাকা ছিল) ও সামরিক যান ব্যবহার করে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং ভিড় সামলানোর মতো কাজ করেছে, যা লস অ্যাঞ্জেলেস ও এর আশপাশে একটি সামরিক উপস্থিতি তৈরি করেছে’।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘সংক্ষেপে বললে, বিবাদীরা পোসে কমিটাটাস আইন লঙ্ঘন করেছে’।

বিচারক ব্রেয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বিবৃতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের মডেলটি অন্যান্য বড় শহরেও অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন। বিচারক মনে করেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ‘নিজেকে প্রধান করে একটি জাতীয় পুলিশ বাহিনী তৈরি করছেন’। নিষেধাজ্ঞা জারির সময় তিনি আরও বলেন, ‘বিবাদীরা বেআইনিভাবে কাজ করবে এমন একটি চলমান ঝুঁকি রয়েছে’।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে গণবিক্ষোভ মোকাবিলায় ট্রাম্পের সামরিক বাহিনীর ব্যবহার অবৈধ।

নিউসম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রায়ের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘একটি ফেডারেল আদালত আমাদের নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেছেন এবং অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগের জন্য ট্রাম্পের অবৈধ সামরিক ব্যবহারকে আটকে দিয়েছেন। রায়টি স্পষ্ট: ট্রাম্প নিজেকে প্রধান করে একটি জাতীয় পুলিশ বাহিনী তৈরির চেষ্টা করে আইন ভঙ্গ করছেন’।

এই জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে সেনা মোতায়েনের পর থেকে প্রায় ৩০০ মার্কিন সেনা এখনো সেখানে রয়ে গেছে। বিচারক ব্রেয়ার ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘পোসে কমিটাটাস আইন’ আইনসম্মতভাবে প্রয়োগ করা না গেলে এসব সেনাকে গ্রেপ্তার, আটক, তল্লাশি, জব্দ, নিরাপত্তা টহল, যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, প্রমাণ সংগ্রহ, জিজ্ঞাসাবাদ বা তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে বলে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারক ব্রেয়ার তার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।