বেইজিংয়ের সামরিক মহড়া: ওয়াশিংটনকে পাল্টা বার্তা?

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইতিহাসের বৃহত্তম সামরিক কুচকাওয়াজ। এই আয়োজনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জুনে আয়োজিত সামরিক কর্মসূচির পাল্টা শক্তি প্রদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটির নাগরিকরা।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এই কুচকাওয়াজ দেখে চীনের সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকেই এই আয়োজনকে দুই মাস আগে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক কুচকাওয়াজের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

গত জুন মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা তার ৭৯তম জন্মদিনের সঙ্গে একই দিনে অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় কয়েক ডজন ট্যাংক ও যুদ্ধযান চলাচল করতে দেখা যায়।

ট্রাম্প সেদিন মার্কিন সেনাবাহিনীকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে ভয়ংকর’ হিসেবে বর্ণনা করে বিশ্বজুড়ে শত্রুদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘আপনি যদি মার্কিন জনগণকে হুমকি দেখান, তাহলে আমাদের সেনাবাহিনী আপনার জন্য আসবে।’ সামরিক বিশেষজ্ঞরা এই বক্তব্যকে মূলত চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরোক্ষ হুমকি হিসেবেই বিবেচনা করেন।

চীনের ফেসবুক হিসেবে পরিচিত ওয়েইবোতে একজন ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ মানে জাতীয় শক্তির প্রদর্শন; আর মার্কিন কুচকাওয়াজ শিথিলতার প্রদর্শন।’ আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের আমেরিকাকে আবার মহান করার প্রচারণার সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, চীনের কুচকাওয়াজ আরও সুন্দর এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এটা বিব্রত করছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয় দেশেরই সর্বাধুনিক ও বিশাল সামরিক বাহিনী রয়েছে এবং উভয় দেশই পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিধর।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের জন্য বিরল সম্মান
চীনের কুচকাওয়াজে আমন্ত্রণ পাওয়া মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য এটি একটি বিরল সম্মান ছিল। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এই জেনারেল আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্রই অগ্রহণযোগ্য হলেও বেইজিং তাকে এই অনন্য সম্মান দিয়েছে।

তার কারণেই মিয়ানমারে গণতন্ত্রের অবসান ঘটেছে এবং দেশটি বছরের পর বছর ধরে এক কঠিন গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে রাজনীতিবিদদের আটক ও সামরিক শাসন জারি রাখার কারণে সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং খুব বেশি বিদেশ ভ্রমণ করেননি।

বর্তমানে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং তরুণরা দলে দলে দেশ ছাড়ছে। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলিরা জানিয়েছিলেন, তারা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করবেন।