অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিভক্তি, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনাও ব্যর্থ

নেপালে তরুণ প্রজন্মের গণবিক্ষোভে অন্তত ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং দেশজুড়ে ভয়াবহ সহিংসতায় সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোর প্রায় ২০০ বিলিয়ন রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করে আত্মগোপনে যাওয়ায় দেশটিতে চরম রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে দেখা দিয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পুলিশের গুলিতে ১৯ জন নিহত হওয়ার পর সহিংস রূপ নেয়। মঙ্গলবার থেকে আন্দোলনকারীরা কাঠমান্ডুর সিংহ দরবার, পার্লামেন্ট ভবন ও সুপ্রিম কোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব স্থাপনার বেশিরভাগই সংস্কারের অযোগ্য এবং নতুন করে তৈরি করতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন রুপি খরচ হতে পারে। কাঠমান্ডু ছাড়াও পোখারা, জনকপুর, বিরাটনগরের মতো বড় শহরগুলোতেও সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি এবং গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারী জেন-জি প্রতিনিধিদের আলোচনা ভেস্তে গেছে। বিতর্কিত চিকিৎসা উদ্যোক্তা দুর্গা প্রসাইকে আলোচনায় যুক্ত করার জন্য সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল জোর দেওয়ায় তরুণ আন্দোলনকারীরা আলোচনা বর্জন করেন। তারা এখন সরাসরি প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেলের সঙ্গে কথা বলতে চান।

আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে চাইছেন। তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন থাকলেও সাংবিধানিক বাধার কারণে তার নিয়োগ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। নেপালের সংবিধান অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা বিচার বিভাগের বাইরে অন্য কোনো পদে দায়িত্ব নিতে পারেন না। এছাড়া, জেন-জিদের একাংশ প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়ায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়।

সাংবিধানিক জটিলতা নিরসনে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল। তিনি বলেন, ‘আমি সংবিধানের মধ্যে থেকেই দেশের বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’ তবে জেন-জি আন্দোলনকারীরা শুধু বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রেসিডেন্টকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

অনিল বানিয়া নামে এক আন্দোলনকারী নেতা বলেন, ‘আমরা সংবিধান পরিবর্তন করতে চাই না, শুধু প্রয়োজনীয় সংশোধনী চাই, যা কার্কিকে অস্থায়ী শপথ নেওয়ার অনুমতি দেবে।’ আরেক বিক্ষোভকারী দীবাকর দাঙ্গাল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। আমরা এখনও দেশের নেতৃত্ব গ্রহণের মতো যোগ্য নই। আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য কেবল পরিবর্তন; পুরোপুরি পরিবর্তন।’

এদিকে, কেপি শর্মা অলি ও শের বাহাদুর দেউবার মতো বর্ষীয়ান নেতারা জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে থাকায় নেপালে এক নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। দেশজুড়ে শান্তি ফেরাতে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে। ধ্বংসযজ্ঞ, রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং এক নতুন প্রজন্মের দৃঢ় সংকল্পের মাঝে নেপাল এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।