গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ইসরায়েলের অনুমোদন

ইসরায়েলি সরকার গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বন্দি বিনিময়ের একটি চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে। শুক্রবার ভোরে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে এই ঘোষণা আসে।

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার বৈঠকে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির ওপর ভোটাভুটির পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস তার প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে মিশর, তুরস্ক ও কাতারের প্রতিনিধিদলের অংশগ্রহণে মিশরের শার্ম আল-শেখ শহরে চার দিন ধরে চলা পরোক্ষ আলোচনার পর এই চুক্তিটি সম্ভব হয়েছে।

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য চুক্তির পক্ষে ভোট দিলেও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচসহ পাঁচজন এর বিরোধিতা করেন। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ‘কান’ জানিয়েছে, চুক্তির বিরোধিতাকারী সব মন্ত্রী বেন-গভির ও স্মোট্রিচের নেতৃত্বাধীন জিউইশ পাওয়ার এবং রিলিজিয়াস জায়োনিজম পার্টির সদস্য।

এই অনুমোদনের ফলে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ‘কান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘হলুদ রেখা’ পর্যন্ত পিছু হটবে। এরপর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসকে জীবিত সকল বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। এই চুক্তি অনুমোদনের মাধ্যমে গাজা উপত্যকা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের সবুজ সংকেতও দেওয়া হলো।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার জন্য ২০-দফা একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন। এতে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং সমগ্র গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পর্যায়ক্রমিক প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়াই গাজায় একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ফিলিস্তিনি এবং আরব ও ইসলামি দেশগুলোর সৈন্যদের নিয়ে একটি নিরাপত্তা বাহিনী গঠন এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া, নতুন প্রশাসনের জন্য আরব ও ইসলামি দেশগুলোর অর্থায়ন এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সীমিত অংশগ্রহণে গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

আরব ও মুসলিম দেশগুলো এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও কিছু কর্মকর্তা বলেছেন, এটি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা ও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬৭,২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই হামলায় উপত্যকাটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।