গাজায় শান্তি চুক্তি: ‘বিশ্বাস করি আবার করি না’, সংশয়ে ফিলিস্তিনিরা

অবশেষে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপ ঘোষিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় মিশরের শারম আল-শেখে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে তুরস্ক, কাতার ও মিশরও অংশ নেয়। চুক্তির আওতায় বন্দিমুক্তি এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী ও টেকসই শান্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে, এই চুক্তি নিয়ে গাজার সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা ও আশঙ্কার দোলাচল দেখা যাচ্ছে। তারা একই সঙ্গে স্বস্তি ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা তরুণী রোবা বলেন, ‘এটি অবশ্যই খুশির খবর, কিন্তু আমি এখনই উৎসব করতে চাই না।’ তিনি জানান, গণহত্যার পর গাজায় আর কিছুই আগের মতো নেই; বাড়িঘর, অবকাঠামো, স্কুলসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় নিজের বাড়ি ধ্বংস হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, কোনো দিগন্ত নেই।’

স্থপতি মোহাম্মদ সুহাইল এটিকে ‘স্বস্তির মুহূর্ত’ হিসেবে দেখলেও সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগেও অনেক ব্যর্থ যুদ্ধবিরতি দেখেছি। তবে এবার আমি বিশ্বাস করতে চাই যে আমরা আমাদের বাড়ি ও জীবন পুনর্নির্মাণ করতে পারব।’ আরব ও আন্তর্জাতিক সমর্থনে গাজার দ্রুত পুনর্গঠন সম্ভব বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

যুদ্ধের আগে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৭ শতাংশ নম্বর পাওয়া ১৯ বছর বয়সি ইব্রাহিম জানান, ‘গণহত্যা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে বিরত রেখেছে, কিন্তু আমার মনোবল ভাঙতে পারেনি।’ তিনি বিদেশে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে পড়তে আগ্রহী এবং বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ইংরেজি শিখছেন।

মানবিক সহায়তা কর্মী ইয়াদ আমাওয়ির মন্তব্যেও এই মিশ্র অনুভূতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আবার করি না। আমরা উৎসব করব, কিন্তু এর সঙ্গে দুঃখ ও উদ্বেগও থাকবে।’ চুক্তি বাস্তবায়নে ইসরায়েল বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, গাজার ফিলিস্তিনিরা এখন পুরো বিশ্বের দিকে তাকিয়ে আছে।