ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে ২০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য মার্কিন সেনারা একটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে।

ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, একটি পর্যবেক্ষক টাস্ক ফোর্সের অধীনে দক্ষিণ ইসরায়েলের হাতজোর বিমান ঘাঁটিতে অন্তত ২০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে। তবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

একজন ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা চ্যানেল ১২-কে জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে গাজা উপত্যকা থেকে আরও সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি আলোচনায় নেই। তবে আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং তার দল ভূখণ্ডটি থেকে আসন্ন সেনা প্রত্যাহারের জন্য মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করেছে।

শনিবার উইটকফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, তিনি, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) কমান্ডার অ্যাডমিরাল ব্র্যাডলি কুপার এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ‘চুক্তির প্রথম ধাপ ইসরায়েল মেনে চলছে কি না তা যাচাই করতে’ গাজা পরিদর্শন করেছেন। ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, উইটকফের গাজা সফরের উদ্দেশ্য ছিল একটি বহুজাতিক টাস্ক ফোর্সের মোতায়েনের স্থানগুলো পর্যালোচনা করা। এই বাহিনীটি ইসলামি, আরব এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনাদের নিয়ে গঠিত হবে।

ইসরায়েলি বাহিনী যেসব শহরাঞ্চল থেকে সরে আসবে, সেই এলাকা এবং গাজার ইসরায়েল সীমান্তের মধ্যবর্তী স্থানে এই বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। চ্যানেলটি আরও জানায়, ‘চুক্তি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজায় প্রবেশ না করা পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আর কোনো সেনা প্রত্যাহার করবে না।’ উল্লেখ্য, গাজায় এই বহুজাতিক বাহিনীর মোতায়েন হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

সোমবার মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি সম্মেলনে এই বাহিনী গঠনের বিষয়টি আলোচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরব দেশগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে এই বাহিনীর কর্মপরিধি নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছে। তবে ইসরায়েল এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, এটি তাদের সামরিক কার্যকলাপের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করবে।

শারম আল-শেখের এই শান্তি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন এবং এতে ২০টিরও বেশি দেশ অংশ নেবে। মিশরীয় প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হলো ‘গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ঘটানো, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনার প্রচেষ্টা জোরদার করা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একটি নতুন পর্যায় শুরু করা’।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং হামাস ২৯ সেপ্টেম্বর তার দেওয়া ২০-দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সম্মত হয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সেখানে আটক সমস্ত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া এবং সমগ্র গাজা উপত্যকা থেকে পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার। চুক্তির প্রথম ধাপ শুক্রবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়া গাজায় একটি নতুন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, একটি বহুজাতিক বাহিনী গঠন এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার কথা বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ৬৭,৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এই হামলায় অঞ্চলটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।