ইউরোভিশন নিয়ে সংকটে অস্ট্রিয়া, ইসরায়েল ইস্যুতে পিছু হটতে পারে ভিয়েনা

ইসরায়েলকে বাদ দেওয়া হলে ২০২৬ সালের ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতা আয়োজন থেকে সরে দাঁড়াতে পারে অস্ট্রিয়া। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ায় এই আয়োজন ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। আগামী বছরের মে মাসে ভিয়েনায় এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

অস্ট্রিয়ার অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ক্ষমতাসীন দল অস্ট্রিয়ান পিপলস পার্টির (ওভিপি) চ্যান্সেলর ক্রিশ্চিয়ান স্টকার এবং সাংবিধানিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আলেকজান্ডার প্রোলসহ বেশ কয়েকজন নেতা ইসরায়েলকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন। ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) যদি ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তারা প্রতিযোগিতা আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে চ্যান্সেলরের দপ্তর থেকে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং সেখানে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের কারণে দেশটিকে বয়কটের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এরই মধ্যে এই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়ে ইবিইউ-এর সাধারণ অধিবেশনে আগামী নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরই মধ্যে স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, ইসরায়েলকে অংশ নিতে দেওয়া হলে তারা প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেবে।

এক্ষেত্রে স্পেনের অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ নামে পরিচিত পাঁচটি প্রধান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকের মধ্যে অন্যতম। এদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস চলতি সপ্তাহে এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা হলে জার্মানিও প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াবে। মের্ৎস বলেন, ‘সেখানে ইসরায়েলের একটি স্থান রয়েছে’।

গত বছর অস্ট্রিয়ার শিল্পী জেজে ‘ওয়েস্টেড লাভ’ গানটির জন্য বিজয়ী হওয়ায় ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতাটি দেশটিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এখন আয়োজন থেকে সরে দাঁড়ালে অস্ট্রিয়ার সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম ওআরএফ-কে প্রায় ৪ কোটি ইউরো জরিমানা গুনতে হতে পারে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট-এর তথ্য অনুযায়ী, ইবিইউ কর্মকর্তারা ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে’ পরামর্শ দিয়েছেন যে ইসরায়েল সাময়িকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বা নিরপেক্ষ পতাকার অধীনে অংশ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রুশ ক্রীড়াবিদদের জন্য ব্যবহৃত ব্যবস্থার মতো একটি আপসের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২৪ ও ২০২৫ সালেও ইউরোভিশন থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি উঠেছিল। তবে ইবিইউ বরাবরই বলে আসছে, এই প্রতিযোগিতা ‘সরকারগুলোর মধ্যে নয়, বরং সরকারি সম্প্রচারমাধ্যমগুলোর মধ্যে’ অনুষ্ঠিত হয়। ইসরায়েল ১৯৭৩ সাল থেকে ইউরোভিশনে অংশ নিয়ে আসছে এবং চারবার বিজয়ী হয়েছে।

এই পরিস্থিতি অস্ট্রিয়াকে একটি কূটনৈতিক ও আর্থিক সংকটের মধ্যে ফেলেছে। একদিকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মনোভাব এবং প্রভাবশালী প্রতিযোগীদের অনুপস্থিতির আশঙ্কা ইউরোভিশনের ঐক্য ও চেতনাকে হুমকির মুখে ফেলছে।