এআই সঙ্গীর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপ ফাঁস, প্রকাশ্যে কোটি কোটি বার্তা

দুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক সঙ্গী অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি ব্যক্তিগত বার্তা ফাঁস হয়ে গেছে, যা প্রায় ৪ লাখ ব্যবহারকারীর গোপনীয়তাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলেছে। ‘চ্যাটি চ্যাট’ ও ‘জিমি চ্যাট’ নামের অ্যাপ দুটির তথ্য ফাঁসের এই বিশাল ঘটনাটি প্রকাশ্যে এনেছে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সাইবারনিউজ।

সাইবারনিউজের গবেষকরা গত ২৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে দেখতে পান, অ্যাপ দুটির হংকং-ভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইমেজিন ইন্টারেক্টিভ লিমিটেড’ তাদের একটি সার্ভার কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই ইন্টারনেটে উন্মুক্ত রেখেছিল। এর ফলে ব্যবহারকারী ও তাদের এআই সঙ্গীর মধ্যকার ব্যক্তিগত আলাপচারিতা, ছবি, ভিডিও এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি ছবির সংযোগ (লিংক) সরাসরি ফাঁস হয়ে যায়। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ লাখ ব্যবহারকারীর বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আইওএস এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের। যদিও ব্যবহারকারীদের নাম বা ইমেইল ঠিকানা ফাঁস হয়নি, কিন্তু তাদের আইপি ঠিকানা ও যন্ত্রের স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর (ডিভাইস আইডেন্টিফায়ার) প্রকাশ হয়ে পড়েছে। সাইবারনিউজের মতে, এই তথ্য অন্য তথ্যভান্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহারকারীদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব।

গবেষণা বলছে, ব্যবহারকারীরা তাদের এআই সঙ্গীকে গড়ে ১০৭টি করে বার্তা পাঠিয়েছেন। এই ডিজিটাল পদচিহ্ন পরিচয় চুরি, হয়রানি বা ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্য থেকে আরও জানা যায়, কিছু ব্যবহারকারী তাদের ‘এআই বান্ধবী’র সঙ্গে কথা বলার জন্য ১৮ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করেছেন এবং তথ্য ফাঁসের আগেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি সম্ভবত ১০ লাখ ডলারের বেশি আয় করেছে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির গোপনীয়তা নীতিতে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তাকে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেওয়ার কথা বলা হলেও সাইবারনিউজের গবেষকরা অরক্ষিত সার্ভারটিতে কোনো ধরনের অনুমোদন বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা খুঁজে পাননি। সামান্য একটি সংযোগ ব্যবহার করেই যে কারও পক্ষে ব্যক্তিগত আলাপ, ছবি ও ভিডিও দেখা সম্ভব ছিল। সাইবারনিউজ বিষয়টি জানানোর পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সার্ভারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে তার আগেই এটি বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে তালিকাভুক্ত হওয়ায় অপরাধী চক্রের হাতে তথ্য চলে গেছে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন।

ফাঁস হওয়া কথোপকথন ও ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল, ফিশিং হামলা এবং সামাজিক সম্মানহানির মতো গুরুতর ঝুঁকি রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে অনেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় কতটা উদাসীন। তাদের মতে, এই ধরনের গোপনীয়তার বিপর্যয় এড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পে আরও কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ড ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।