সিরিয়ায় নিখোঁজদের সন্ধানে নতুন আশা, জীবিত থাকার প্রমাণ মিলেছে

সিরিয়ায় যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হওয়া কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এখনো জীবিত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে নিখোঁজদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা জোরদার হওয়ায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ‘টিআরটি ওয়ার্ল্ড ফোরাম ২০২৫’-এর এক ফাঁকে সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান সিরিয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য জাতিসংঘ-প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন কার্লা কুইনতানা। তিনি জানান, নিখোঁজদের মধ্যে কেউ কেউ যৌন দাসত্ব বা মানব পাচারের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।

কুইনতানা বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি নিখোঁজদের বিষয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরীয় সরকারের হাতে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি, নিখোঁজ শিশু, অভিবাসী এবং জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস (দায়েশ) কর্তৃক অপহৃত ব্যক্তিরা।

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, দশ মাস আগেও আমরা শাসকদের পতনের পর নিখোঁজদের খুঁজতে সিরিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবতেও পারতাম না। এখন আমরা সিরিয়ায় প্রবেশ করতে পারছি এবং লাখ লাখ নিখোঁজ সিরীয়দের সন্ধান করছি।’

আন্তর্জাতিক সহায়তায় জাতীয় প্রচেষ্টা

কুইনতানা বলেন, নিখোঁজদের সন্ধান অবশ্যই সিরিয়ার ভেতর থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। এজন্য তিনি সিরীয় কর্তৃপক্ষ, নাগরিক সমাজ এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়ের আহ্বান জানান।

তিনি আরও জানান, তার প্রতিষ্ঠানটি সিরিয়ায় সম্প্রতি গঠিত ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর দ্য সার্চ অব দ্য মিসিং’-এর সঙ্গে কাজ করছে এবং দামেস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তার মতে, ‘বিশ্বে এই প্রথম কোনো নিখোঁজদের খোঁজার জন্য একটি আন্তর্জাতিক এবং একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে কাজ করছে।’

প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৪০ জন কর্মী থাকলেও এই সংকট মোকাবিলায় আরও ব্যাপক সহযোগিতার প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং আস্থা

কুইনতানা জানান, জীবিত ও মৃত উভয়কে শনাক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং ফরেনসিক বিজ্ঞান অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা ফরেনসিক বিজ্ঞানের কথা বলি, তখন তা শুধু মৃতদের বিষয় নয়। জীবিতদের শনাক্ত করতেও আমাদের ডিএনএ প্রয়োজন।’

তবে তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরি করা। তিনি বলেন, ‘সব পক্ষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে না পারলে আমরা নিখোঁজদের খুঁজে বের করতে পারব না।’

‘আমরা এরই মধ্যে দেরি করে ফেলেছি’

পরিবারগুলো যেন তাদের প্রিয়জনের ভাগ্য সম্পর্কে জানতে পারে, সেজন্য আর দেরি করা উচিত নয় বলে সতর্ক করেন কুইনতানা। তিনি বলেন, ‘শুধু সিরিয়া নয়, সারা বিশ্বেই নিখোঁজদের খোঁজার ক্ষেত্রে আমরা এরই মধ্যে দেরি করে ফেলেছি। আমরা জানি, পরিবারের সত্য জানার অধিকার আছে, কিন্তু এই প্রক্রিয়া যে সময়সাপেক্ষ, তা ব্যাখ্যা করার দায়িত্বও আমাদের।’

তুরস্ক ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা

যুদ্ধের সময় বাস্তুচ্যুত সিরীয়রা তুরস্ক এবং পার্শ্ববর্তী অনেক দেশে অবস্থান করায় তথ্য সংগ্রহের জন্য ওই দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ওপর জোর দেন কুইনতানা। তিনি বলেন, ‘নিখোঁজদের খোঁজার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তথ্য পাওয়া এবং তা আদান-প্রদান করা।’

কুইনতানা আরও বলেন, ‘এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং আমি নিশ্চিত যে তুরস্ক এই প্রচেষ্টায় একজন মিত্র হিসেবে পাশে থাকবে।’